‘গুরুত্বপূর্ণ সময়ে’ সচিবশূন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগে পূর্ণ সচিবের পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পূর্ণ সচিব না থাকাটা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, ঠিক সেই সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো সংবেদনশীল দপ্তরে দুই সপ্তাহ ধরে পূর্ণ সচিব না থাকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক এবং এটি প্রসাশনিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়। সেদিনই তিনি বিদায় নেন। তার বিদায়ের পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ সচিব নেই প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। তবে অতিরিক্ত সচিব (সিপিটি অনুবিভাগ) ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামানকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মো. মোখলেস উর রহমানকে যেদিন বদলি করা হয় সেদিনই তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন। এরপর সিপিটি অনুবিভাগের দায়িত্বরত অতিরিক্ত সচিব ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামানকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোনো উপদেষ্টা নেই। এ মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার হাতে রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে পূর্ণ সচিব না থাকায় মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অনেক কমে গেছে।
আরও পড়ুন
৬ মাস ধরে সচিব নেই সমবায় বিভাগে, ৭ মাসের বেশি খালি ছিল প্রাণিসম্পদ
গত ২৫ মার্চ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এ বিভাগেও পূর্ণ সচিব নিয়োগ করা হয়নি। অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেন রুটিন দায়িত্বে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত বছরের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এরপর ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে সেখানে বদলি করা হয়। কিন্তু, বদলির এক মাস নয়দিন পর অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে আবারও বদলি করা হয়। এরপর থেকে ৭ মাস এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ সচিব ছিল না।
দীর্ঘদিন খালি থাকার পর গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনি যোগ দিতে পারেননি।
শেষে ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। পরদিন (২১ আগস্ট) যোগ দেন তিনি।
আরও পড়ুন
৩ মাস খালি ছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পদ
৩০ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ৩ মাস খালি ছিল সচিবের পদ। নিয়োগ পাওয়ার পর গত ৩০ জুলাই আব্দুন নাসের খান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব পদে যোগদান করেন।
এই তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাইরে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দীর্ঘদিন সচিবের পদ শূন্য ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
এই সময়ে সচিব পদে শূন্যতা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট লেখক ফিরোজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এতদিন খালি পড়ে থাকা অত্যন্ত হতাশাজনক। সামনে নির্বাচন, মাঠ প্রশাসনকে সাজানোর এটাই সময়। এমন পরিস্থিতিতে সচিব পদে শূন্যতা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কিছুদিন সচিব না থাকলেও সমস্যা হতো না, কিন্তু এখন নির্বাচন আসন্ন। এই সময়ে সচিব পদ শূন্য থাকা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। সরকারের উচিত ছিল দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের বাইরে থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল। অতীতে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থেকেও জরুরি বিষয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে অনুমোদন দিতেন। তাই এটি কোনো অজুহাত হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, রুটিন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কোনো নীতি-নির্ধারণী বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি শুধু আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন, নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় কার্যত স্থবির হয়ে আছে।
ফিরোজ মিয়া মনে করেন, নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসন সচিবের পদ শূন্য থাকা নির্বাচনী প্রস্তুতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এসএইচআর/এমজে