বাংলাদেশ জাতীয় লীগসহ ৩ দলের কার্যক্রম যাচাইয়ে ইসির তদন্ত কমিটি
নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও ফের তদন্তের মুখে পড়েছে তিনটি নতুন রাজনৈতিক দল। দলগুলো হলো— বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ)। দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব ও ধারাবাহিক কার্যক্রম যাচাইয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাজমুল কবীর স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
কেন এই অধিকতর তদন্ত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সংবাদে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের কার্যক্রম ও কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গণমাধ্যমের কিছু সংবাদ এসেছে যেখানে বলা হয়েছে এ দলের কার্যক্রমে নেই। আবার কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়েও রয়েছে সংশয়। এমন তথ্য আসার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব, ধারাবাহিক কার্যক্রম যাচাইয়ে আবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, অন্য দুটি দলের বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
কমিটির গঠন ও সময়সীমা
ইসির চিঠি অনুযায়ী, নিবন্ধন প্রত্যাশী ২২টি দলের আবেদন ও কাগজপত্র প্রাথমিকভাবে সঠিক বিবেচিত হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে তথ্য যাচাই করা হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে এই তিন দলের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ শাখার যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল হালিম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি আগামী কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
আগের অবস্থা ও বর্তমান চিত্র
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, দুটি দল— জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে। সেই সময় তিনি আরও বলেছিলেন, এই দুটি দলের বিষয়ে দাবি বা আপত্তি জানানোর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
ওই সময়ে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ) সচিবালয় পর্যায়ে এবং আংশিকভাবে মাঠপর্যায়ে অধিকতর পর্যালোচনা করার কথা ছিল। বর্তমানে, নিবন্ধন শর্ত পূরণ করা বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নতুন তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টিকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুনরায় মাঠে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আদ্যোপান্ত
নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি দল আবেদন করলেও প্রথমে কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পুনর্বাছাই শেষে ১২১টি দলের আবেদন বাতিল হয়। পরে মাঠপর্যায়ে যাচাই করা ২২টি দলের মধ্যে ৭টি দল বাদ পড়ে। ২টি দল (এনসিপি ও জাতীয় লীগ) শর্ত পূরণ করে। এবং বাকি ১০টি দলের ওপর অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
নিবন্ধনের শর্তাবলি
আইন অনুযায়ী, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটি, এবং ১০০ উপজেলা কমিটি থাকতে হয়। এছাড়া, প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকা আবশ্যক। যাচাই ও দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর সব ঠিক থাকলে ইসি দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে।
বর্তমানে ইসিতে ৫২টি দল নিবন্ধিত রয়েছে (আওয়ামী লীগসহ)। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার পর মোট ৫৬টি দল নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থতা বা আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো— বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালত জামায়াতে ইসলামী ও জাগপার নিবন্ধন ফিরিয়ে দিলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
এসআর/এমএন