জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে ইসির নজর ১৩ ইস্যুতে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হবে।
সংসদ নির্বাচনের সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রচার রোধ করার বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রাধান্য পাবে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রাক প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সভায় নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোট ১৩টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। এজন্য বিস্তারিত বলা সম্ভব না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রাক প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যপত্রে বলা হয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন ছিল ৩০০টি যা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ৩০০টি আসন থাকছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার, যা আগামী সংসদ নির্বাচনে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ২৮ হাজার ৮০৯ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহিলা ভোটার ছিল ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ১০৩ জন, যা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে ৬ কোটি ২৩ লাখ ৬ হাজার ১৭৭ জন। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিজড়া ভোটার ছিল ৮৫১ জন, যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ১৮৫ জনে। নারী, পুরুষ ও হিজড়া মিলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭১ জন, যা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন।
ইসি জানায়, এই সাড়ে ১২ কোটির বেশি ভোটার ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, যা গত সংসদ নির্বাচনে ছিল ৪২ হাজার ১৪৮টি। সেই সাথে আসন্ন নির্বাচনে এই ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে মোট ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি, যা গত নির্বাচনে ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বাড়লেও কমেছে ভোটকক্ষ।
সংস্থাটি আরও জানায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬৬ জন। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ জন বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জন জেলা প্রশাসক রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৫৯২ জন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৪৯৫ জন, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ১৪ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ৮ জন, জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার ১১ জন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার ৫৬ জন এবং অন্যান্য ৮ জন দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বিষয়েও কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছে ইসি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠকের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আমাদের বৈঠক হবে। এটা আমি জানি। এর বাইরে কি কি বিষয়ের উপর আলোচনা হবে, সেটা বলতে পারবো না। তবে আমরা প্রথমে তাদের কথা শুনতে চাই এবং আমাদের কিছু বলার থাকলে বলবো।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটার বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। এই বিষয়ে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
১৩টি বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো–
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও পরিবেশ : ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
সমন্বয় ও সুসংহতকরণ : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল সংস্থাসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় ও সুসংহতকরণ নিশ্চিত করা।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং নির্বাচনি সময়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ : অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা।
সাইবার নিরাপত্তা : এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধে কার্যকরী কৌশল নির্ধারণ করা।
বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক : নির্বাচনে আগত বিদেশি সাংবাদিক ও প্রাক পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়া।
মোতায়েন পরিকল্পনা : নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা।
দুর্গম এলাকায় সহায়তা : পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহণ এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা।
ড্রোন নিষিদ্ধকরণ : নির্বাচনের সময় ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের তুলনামূলক তথ্য : সভায় দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ তথ্যাবলির একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
বৈঠকে যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি–
সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ/কোস্টগার্ড/আনসার ও ভিডিপি/ডিজিএফআই/এনএসআই/এনটিএমসি/র্যাবের মহাপরিচালক এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)/ সিআইডি অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক।
এসআর/বিআরইউ