চার যুগ পর কুয়েতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠক ঢাকায়
কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চার যুগ পর কুয়েতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের আলোচনা প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক হচ্ছে বাংলাদেশে। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় প্রথম বৈঠকে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে দুদেশের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা-তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) মো. নজরুল ইসলাম। কুয়েতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত সামি ঈসা জোহর হায়াত।
বিজ্ঞাপন
২০০৬ সালে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে চুক্তি সই করে দুই দেশ। ওই চুক্তির আওতায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে ১৯ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকে আলোচনার মধ্যে রয়েছে- উভয় দেশের মধ্যে দূতাবাস স্থাপনের জন্য প্লট বরাদ্দ হস্তান্তর, শ্রমবাজার, ঢাকা-কুয়েত সরাসরি ফ্লাইট চালু, তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা, ঢাকার পূর্বাচলে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্প্রসারণ, অবকাঠামো ও কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, কুয়েতে হালাল পণ্যের অ্যাক্রিডিটেড সার্টিফিকেট বা সনদ প্রাপ্তিতে সহায়তা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকায় পৌঁছাবেন। একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে রোববার দুপুরে তিনি বাংলাদেশে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)-তে নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকের পর তিনি পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া, তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অথবা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জনিয়েছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাইরে দ্বি-পক্ষীয় চুক্তিতে কুয়েতে বাংলাদেশের একটি সামরিক কন্টিনজেন্ট কাজ করছে। যারা সরাসরি কুয়েত সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কিছু আছেন কর্মরত অবস্থায়। প্রকৌশলী, ডাক্তার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এই দলের সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের পর অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওকেবি) প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বি-পক্ষীয় চুক্তিতে কুয়েতে বাংলাদেশের একটি সামরিক কন্টিনজেন্ট কাজ শুরু করে, যেটি দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অন্যতম অনুসঙ্গ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কুয়েতে বহুবার সফর হয়েছে, আমরা গেছি, তারা আসছে। কিন্তু পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক হয়নি। কুয়েতের সঙ্গে এটা প্রথম এফওসি। বৈঠকে দূতাবাস স্থাপনের জন্য উভয় দেশের মধ্যে প্লট বরাদ্দ হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা হবে। এছাড়া শ্রমিক প্রেরণে সহযোগিতা চাইবো। তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা চাইবো। এছাড়াও পূর্বাচলে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হবে- এটাতে কুয়েত সহযোগিতা করবে কিনা তা জানতে চাওয়া হবে। সরাসরি ফ্লাইট চালু ও হালাল পণ্যের সনদ প্রাপ্তিতেও সহযোগিতা চাইবো।
ঢাকার একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, কুয়েত থেকে সার কিনতে চায় বাংলাদেশ, তাই বৈঠকে সার কেনার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া, শ্রমবাজার, বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতা সম্পর্কেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে সেনাপ্রধান বা পিএসও-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুয়েতের সঙ্গে আমাদের ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দুদেশের পররাষ্ট্র সচিবেরা প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য-বিনিয়োগ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
কুয়েতের বাংলাদেশ মিশনে কাজ করা এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ কুয়েত থেকে এলএনজি আমদানি করে থাকে। তবে সমস্যা হচ্ছে, সরাসরি বন্দর দিয়ে আনা সম্ভব না হওয়ায় খরচ বেড়ে যায়। আমরা কৃষি খাতে সহযোগিতা করতে পারি। এছাড়া আমাদের শ্রমিকরা কুয়েতের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আগামীতে তারা কিছু এক্সপো আয়োজন করবে, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজে লাগতে পারে। কনস্ট্রাকশন খাতেও তারা চাইলে আমাদের শ্রমিক নিতে পারে।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল উপসাগরীয় দেশ কুয়েত।
এনআই/এমএসএ