চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত কয়েকজন সচিবকে এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে বদলির ঘটনায় প্রশাসনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ পদক্ষেপ নজিরবিহীন ও বিতর্কিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যাদের বার বার বদলি করা হচ্ছে তারা নিজের কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে সমালোচনা আছে।

কোনো কর্মকর্তার কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বিবেচনায় তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পদ ছাড়তে হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন বিতর্কিত সচিবকে বার বার অন্য দপ্তরে বদলি করছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে মো. মোখলেস উর রহমানকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি এ পদে যোগদানের পর প্রশাসনে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পদায়ন ও পদোন্নতিতে বঞ্চিতদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ ওঠে। সচিব, সংস্থাপ্রধান ও জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হয়। এ পদে কর্মরত থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগও ওঠে। গত ২১ সেপ্টেম্বর মোখলেস উর রহমানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়।  

গত বছরের ১৪ অক্টোবর দুই বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান এম এ আকমল হোসেন আজাদ। কিন্তু মাত্র দুদিন পর, ২০ আগস্ট তাকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বদলি করা হয়। এরপর ২০ নভেম্বর আবারও তাকে বদলি করে পাঠানো হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে। সেখানে এক মাসও না কাটতেই ২৯ ডিসেম্বর তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়

চলতি বছরের ২১ জুলাই দুপুরে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২২ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। শোকাবহ পরিস্থিতিতে ওই দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত আসে অনেক দেরিতে। ২১ জুলাই দিবাগত রাত পৌনে ৩টায় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিলম্বিত সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। ‘অপেশাদারিত্বের’ অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে বিক্ষোভ করেন এবং শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার ও সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগ দাবি করেন। আন্দোলনের মুখে সেদিনই সিদ্দিক জোবায়েরকে অব্যাহতি বা প্রত্যাহার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষা স্থগিতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিক জোবায়ের। যদিও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ২৩ জুলাই সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। তিন মাস পর, ১২ অক্টোবর তাকে জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির (এনএপিডি) মহাপরিচালক (সিনিয়র সচিব) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এক সচিবকে তিনবার বদলি 

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান এম এ আকমল হোসেন আজাদ। কিন্তু মাত্র দুদিন পর, ২০ আগস্ট তাকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বদলি করা হয়। এরপর ২০ নভেম্বর আবারও তাকে বদলি করে পাঠানো হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে। সেখানে এক মাসও না কাটতেই ২৯ ডিসেম্বর তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর দুই বছরের জন্য সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করা হয়। 

অন্যদিকে, গত ১২ অক্টোবর চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করে সরকার।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের শর্তেই বদলি বা পদায়নের সুযোগ থাকে। কিন্তু যদি কোনো কর্মকর্তা ভালো পারফর্ম করতে না পারেন, তার চুক্তি বাতিল হওয়ার কথা। কর্মদক্ষতা ভালো না হলে অন্য জায়গায় বদলি করা যৌক্তিক নয়।

তিনি বলেন, যিনি এক জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি অন্য জায়গায় সফল হবেন- এটা আশা করা বাস্তবসম্মত নয়।

এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও ধরেননি তিনি। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য চাইলেও পাওয়া যায়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের চুক্তিপত্রে বদলি করার সুযোগ রাখা ছিল। সে অনুযায়ী বদলিগুলো করা হয়েছে।

এসএইচআর/এমএসএ