রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার উলন এলাকায় চোর সন্দেহে প্রায় ১৬ ঘণ্টা আটকে রেখে মোহাম্মদ বাপ্পি (১৭) নামে এক কিশোরকে মারধর করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ফৌজিয়া আক্তার প্রীতি নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

নিহত বাপ্পির বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার নলবুনিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে ছিল। বর্তমানে শ্যামপুর থানার ধোলাইপাড় এলাকার বাসিন্দা।

নিহতের বড় ভাই পারভেজ জানান, আমার মা ও ছোট ভাই একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মাদক ব্যবসায়ী কাপসি রাসেল, মোল্লা শুভ ও ময়না সাকিব বাসায় এসে আমার ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। পরে তাকে গাড়িতে কাজ করাবে বলে বাসা থেকে নিয়ে যায়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাকে আবার আমাদের বাসায় নিয়ে আসে এবং জানায়— আমার ছোট ভাই বাপ্পি এক নারীর চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের বিদ্যুতের কার্ড জানালার পাশ থেকে চুরি করেছে। ভোরবেলা তারা বাসার সব জায়গা তল্লাশি করে এবং আমার মায়ের সামনেও তাকে মারধর করে।

‘এরপর তারা আমার ভাইকে আবার বাসা থেকে নিয়ে যায়। মা তাদের অনুরোধ করে বলে, আমার ছেলে যদি চুরি করে থাকে তাহলে তাকে পুলিশে দিয়ে দাও। কিন্তু তারা আমার মায়ের কথায় কর্ণপাত না করে তাকে আবার ফৌজিয়া আক্তার প্রীতির বাসায় নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে।’

তিনি আরও বলেন, পরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে আহত অবস্থায় সাইফুল ইসলামের বাড়ির রাস্তায় অটোরিকশা থেকে ফেলে যায়। ওই সময় আমার ভাই মাকে বলেছিল— পানি খাব ও অনেক খিদে লাগছে। কিন্তু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করলে তার কিছুক্ষণ পর আমার ভাই মারা যায়। এ ঘটনায় আমার মা বাদী হয়ে ফৌজিয়া আক্তার প্রীতি, মাদক ব্যবসায়ী কাপসি রাসেল, মোল্লা শুভ, ময়না সাকিব ও এনানসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে বাসার মালিক ফৌজিয়া আক্তার প্রীতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাপ্পির বাবা শাহজাহান বলেন, আমার ছেলেকে তারা মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে হাতুড়ি ও এসএস পাইপ দিয়ে সারা শরীরে মারধর করে। হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে, এরপর তারা সারা শরীরে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে দেয়। আমার ছেলে যদি সত্যি চুরি করে থাকে, তাহলে তারা তাকে পুলিশে দিত। তারা এভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করল। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান জুয়েল।

তিনি বলেন, চোর সন্দেহে তুলে নিয়ে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে তার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় ফৌজিয়া আক্তার প্রীতি নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত, তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আমরা তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এসএএ/এমজে