অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সিদের জন্য ১০ লাখ টাকা জামানতের প্রস্তাব বাতিলের পাশাপা‌শি এক এজেন্সির সঙ্গে অন্য এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের বিধান বাতিল করার দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিরা।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্ট‌নে হো‌টেল ভিক্ট‌রির সাম‌নে এক মানববন্ধন থে‌কে এসব দা‌বি জানায় অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সদস্যরা।

সম্প্রতি ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫ (খসড়ার) ওপর আটাব আয়ো‌জিত মানবন্ধ‌নে বক্তারা ব‌লেন, এই খসড়া আইনে কিছু ধারা রয়েছে যা দেশের ট্রাভেল ট্রেডের জন্য চরম ক্ষতিকর। বিশেষ করে অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সির জন্য ১০ লাখ টাকা জামানতের প্রস্তাব, এক এজেন্সির সঙ্গে অন্য এজেন্সির ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং জেল-জরিমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব সবকিছুই অযৌক্তিক ও ব্যবসাবান্ধব নয়।

তারা ব‌লেন, বাংলাদেশের ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাত ইতোমধ্যেই কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন আইন দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ধারা প্রণয়ন করা হলে লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। সরকার যদি এই খাতের উন্নয়ন চায়, তবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন আইন প্রণয়ন করা যাবে না।

বক্তারা আরও বলেন, অতীতে ট্রাভেল ট্রেডের ওপর আরোপিত যেকোনো নেগেটিভ বিষয় দৃঢ়ভাবে আটাব প্রতিহত করেছে। আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে যখন ট্রেডের এমন সংকটময় অবস্থা, তখন সরকারের সঙ্গে বার্গেনিং করার মতো শক্তিশালী আটাব কমিটি অনুপস্থিত।

আটাবের সা‌বেক সভাপ‌তি আবদুস সালাম আরেফ ব‌লেন, ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া আইনে কিছু ধারা রয়েছে, এটা নি‌য়ে আমরা গভীরভা‌বে উদ্বেগ প্রকাশ কর‌ছি। অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সির জন্য ১০ লাখ টাকা জামানতের প্রস্তাব কো‌নোভা‌বে মে‌নে নেওয়া হ‌বে না, এটা বাতিল করতে হবে। এক এজেন্সির সঙ্গে অন্য এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের বিধান বাতিল করতে হবে। জেল ও জরিমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হ‌বে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আটাব-এর কমিটি বাতিল করে সংগঠনকে দুর্বল করার একটি সিন্ডিকেট-চালিত নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এটি পুরো ট্রাভেল শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যবসাবান্ধব ও ন্যায্য আইন প্রণয়ন করা হোক। খসড়া আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধন করে একটি বাস্তবসম্মত, অংশগ্রহণমূলক আইন প্রণয়নই এখন সময়ের দাবি। 

আটাবের দাবিগুলো হলো : অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সিদের জন্য ১০ লাখ টাকা জামানতের প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। কারণ এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি এজেন্সিগুলোর টিকে থাকার পথ রুদ্ধ করবে। অনেক ছোট মাঝারি ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে তাদের পক্ষে ১০ লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে জামানত রাখা সম্ভব নয়, এ পরিমাণ টাকা জামানত রাখতে গেলে ছোট ও মাঝারি ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে।

এক এজেন্সির সঙ্গে অন্য এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের বিধান বাতিল করতে হবে। কারণ এটি শিল্পের কার্যক্রম সীমিত করবে ও ব্যবসায়িক সেবার মান নষ্ট করবে। যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন না, যার ফলে যাত্রী হয়রানি ও বিড়ম্বনা বাড়বে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, যাতে করে দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে।

জেল ও জরিমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করে পূর্বের বিধান বহাল রাখতে হবে, যাতে অপ্রয়োজনে হয়রানি ও প্রশাসনিক চাপ না বাড়ে। নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি ভোগ না করে তা নিশ্চিত করা।

এনআই/এসএম