প্রথমদিন অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান বাধার মুখে পড়ে

রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক ও বর্তমান মেয়রের বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নিজের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর এবার দোকান মালিকদের নিয়ে মাঠে নামছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।

অবৈধ দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর মার্কেটে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। প্রথমদিনের অভিযান দোকানিদের বাধার মুখে পড়লেও ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ক্ষতিপূরণ ও পূর্নবাসনের দাবিতে শনিবার (৯ জানুয়ারি) হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন দোকানিরা। ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এ মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।  

সাবেক মেয়রের জনসংযোগ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

দোকান বৈধতা দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সাঈদ খোকন ছাড়াও ডিএসসিসির সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদকে মামলায় আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ রয়েছে।

মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর এ ব্লকে নির্মিত নকশাবহির্ভূত স্থাপনাগুলো বৈধতা দেওয়ার কথা বলে আসামিরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা নিয়েছেন। তবে পরে তাদের সেসব দোকান উচ্ছেদ হলেও তারা টাকা ফেরত পাননি।

ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়র

ব্যবসায়ীদের দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং সিটি করপোরেশন সভার মাধ্যমে এসব দোকানের বৈধতা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ট্রেড লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া আদায় করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু এই দোকানগুলো অবৈধ উল্লেখ করে সেগুলো উচ্ছেদে নেমেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

এর আগে দোকান উচ্ছেদের বিরোধিতা করে সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ডিএসসিসির বোর্ড মিটিংয়ে ওই মার্কেটের নতুন নকশা অনুমোদন হয়। সে অনুযায়ী, বকেয়া অর্থ আদায় করে ব্যবসায়ীদের কাছে সেসব দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র ফজলে নূর তাপস ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দিয়ে নোংরামি করাচ্ছে। যার মাধ্যমে তার নিজের ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সম্প্রতি ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সুশাসিত ঢাকা আমাদের ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সুশাসিত ঢাকা ছাড়া উন্নত ঢাকা গড়া সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি এতে হেয় প্রতিপন্ন হন, লজ্জিত হন, সেটা সেই ব্যক্তির বিষয়।

তিনি এসময় বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনভাবেই এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমরা কোনোভাবেই সেটাতে আপস করব না।

এএসএস/এসআরএস