প্যারিস চুক্তির ৯.১ ঘিরে মতবিরোধ
জলবায়ু অর্থায়নে ‘অচলাবস্থা’, নতুন সংকটের ইঙ্গিত দেখছে বাংলাদেশ
প্যারিস চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯.১–কে স্বতন্ত্র এজেন্ডা আইটেম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না— এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধের জেরে কপ৩০– এর জলবায়ু অর্থায়ন আলোচনায় অচলাবস্থার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। দেশটি জানিয়েছে, এই জটিলতা শুধু আলোচনাকে ধীর করছে না বরং নতুন সংকটেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমনকি এ বিষয়ে অগ্রগতি না হলে জলবায়ু আলোচনার ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলেও উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০–এর মধ্যবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের উপপ্রধান ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, অনুচ্ছেদ ৯.১–কে আলাদা এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত না করা উন্নত দেশগুলোর আর্থিক দায় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত করছে। আর অচলাবস্থার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর হতাশা বাড়ছে। যেসব দেশ ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ক্ষতি, ঋণের চাপ আর ঘনঘন দুর্যোগের মুখে— তাদের জন্য এই ধীরগতি আরও ভয়াবহ।
নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, অনুচ্ছেদ ৯.১–কে এজেন্ডায় স্থান না দেওয়ার বিতর্ক ক্ষতি–ক্ষতিপূরণ তহবিল এবং গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ)–সংক্রান্ত আলোচনাগুলোকে আড়াল করে দিচ্ছে, যা কপ৩০–এর সামগ্রিক অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাছাড়া প্যারিস চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯.১–এ উন্নত দেশগুলোর ওপর প্রশমন এবং অভিযোজন— দুই ক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থায়নের বাধ্যবাধকতা নির্ধারিত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নাভিদ শফিউল্লাহ আরও বলেন, অভিযোজনের জন্য ঋণ শুধু ভঙ্গুরতা বাড়ায়। পূর্বানুমানযোগ্য ও দেশ–অনুকূল অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। তিনি এলডিসি ও এসআইডিএস দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক অর্থায়ন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, বাংলাদেশ কোনো দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আপত্তিকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করছে না। তবে মূল মতপার্থক্য হলো—৯.১–এর জন্য একটি স্বতন্ত্র আলোচনার জায়গা তৈরি করা কি প্রয়োজন। আলাদা এজেন্ডা ছাড়া এই বিষয়ের গুরুত্ব যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও জাতিসংঘ উইং প্রধান একেএম সোহেল জানান, কপ২৯–এ বার্ষিক প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটি বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ খুঁজছে। আলোচনা কঠিন হলেও আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধভাবে অংশ নিতে চায়।
প্রতিনিধি দল জানায়, কপ৩০–এর দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে— নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন রোডম্যাপ, ২০৩০ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ বাড়িয়ে ১২০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া, অনুদানভিত্তিক সরকারি অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
সম্মেলনে বাংলাদেশ জানায়, টানা তিন বছর ধরে জিজিএ নিয়ে আলোচনা হলেও লক্ষ্য, সূচক এবং বাস্তবায়ন কাঠামো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই সিএমএ৭–এ কাঠামো গ্রহণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা। অর্থায়ন কাঠামোর বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী সেশনগুলোতে চলতে পারে।
এদিকে, ক্ষতি–ক্ষতিপূরণ তহবিলের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আরও কার্যকর ব্যবস্থা চেয়েছে। প্রতিনিধি দল বলছে, দ্রুত অর্থ ছাড়, সরাসরি জাতীয় প্রবেশাধিকার এবং বৃহত্তর জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থার সঙ্গে শক্ত সংযোগ ছাড়া এই তহবিল তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না।
টিআই/এমজে