বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘বিজ্ঞান এখন উন্নত হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার সবগুলোই মিথ্যা। এসব চলতে দেওয়া না হলে আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সব রাস্তায় গরুর গাড়ি দিয়ে ভরে দেব। একটা এসি গাড়িও চলতে দেব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো বিজ্ঞানের ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এগুলোর জন্য খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। এটার গতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ব্রেক কিভাবে আরেকটু উন্নত করা যায়, ব্যালেন্সড কীভাবে করা যায় এগুলো আমাদের রিকশাচালক ভাইয়েরা জানেন। তোমরা (সরকার) না পারলে আমাকে দায়িত্ব দাও, আমি রিকশাওয়ালা ভাইদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু, এই অজুহাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ করা চলবে না। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এগুলো আর চালাতে দেওয়া হবে না। আমি বলতে চাই, যদি এদেশে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা না চলে তবে এই সরকারকেও আমরা চলতে দেব না।’

বুধবার (২৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমানে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ অন্যান্য বক্তারা বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন রাখতে চাই। দেশে লাখ লাখ রিকশাচালক চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অথবা সম্পত্তি বিক্রি বন্ধক রেখে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের অমানবিক শ্রম লাঘব করেছে। উপরন্তু গণপরিবহন হিসেবে এখনও দেশের শহর কিংবা গ্রামে রিকশা অপরিহার্য। এ অবস্থায় কোনো যুক্তিতেই সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সর্বস্বান্ত করে পথে বসিয়ে দিতে পারে না।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, সারা দেশে অন্তত পাঁচ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বুয়েট প্রস্তাবিত রিকশাবডি, এমআইএসটি উদ্ভাবিত গতি নিয়ন্ত্রক, উন্নত রেকসহ ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দিতে হবে। রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকৃত রিকশাচালকদের লাইসেন্স দিতে হবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, পরিবহন শ্রমিকনেতা হযরত আলী, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদৎ খাঁ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল ইসলাম নাদিম, অনিক রায় প্রমুখ।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি

সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অযৌক্তিক ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। নকশার আধুনিকায়ন, নীতিমালা প্রণয়ন ও নিরাপদ ব্রেক পদ্ধতির মাধ্যমে গতি নিশ্চিতের আহ্বান জানা তারা। এছাড়াও ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকসহ যান্ত্রিক বাহনের দ্রুত লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এসব দাবি জানান বক্তারা। দাবি আদায় না হলে আগামী ২৫ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল, ১০ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও সব জেলার ডিসিদের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং ১০ জুলাইয়ে পর থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশার নকশা পরিবর্তন ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য গোলটেবিল বৈঠক করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত দেড় বছরে করোনা মহামারি ও টানা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত নানা পেশার শ্রমিকরা কর্মহীন হয়েছেন। বেকার ও ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের পাশে সরকার ও মালিকরা দাঁড়ায়নি। করোনা মহামারিতে নতুন করে আরও ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষসহ দেশের ৫০ ভাগের ওপরে মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছেন। এই সময়ে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মরত ৫০ লাখ রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন এবং করিমন চালককে বেকার ও কর্মহীন করার চক্রান্ত চলছে। 

টাস্কফোর্সের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, ‘দেশের সব জায়গায় আমরা যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে ব্যাটারি রিকশা ও ভ্যান বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।’ তখন কার্যত তিনি এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন। কিন্তু সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ৫০ লাখ চালক ও তাদের পরিবার-পরিজনের বিষয়ে কিংবা দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ যারা এর সুফল ভোগ করছেন তাদের জন্য কোনো বিকল্প চিন্তা করা হয়নি।

বক্তারা আরও বলেন, টাস্কফোর্সের সভায় ব্যাটারি রিকশার ব্রেক পদ্ধতি বা তার কাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়ে দুর্ঘটনার কারণ দেখিয়ে তা রাস্তা থেকে থেকে উচ্ছেদের কথা বলছেন। কিন্তু সেই কাঠামোগত দুর্বলতা কাটানোর কোনো সুপারিশ না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত অনেকটা মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতো। ডিজিটাল যুগে এসে ম্যানুয়্যাল প্যাডেল চালিত রিকশায় মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শারীরিক কষ্টকে লাঘব করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে টাস্কফোর্সের সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা তানভীর নাঈম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রতন মিয়া প্রমুখ।

এমএইচএন/ওএফ