ধর্মীয় প্রোগ্রামে সখ্যতার পর অপহরণ, কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহরণ করা চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটি ভিকটিমদের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে পরিচিত হতো।
সিআইডি জানায়, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সিআইডি বা পুলিশের নাম ব্যবহার করে লোকজনকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়, মারধর ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করছিল।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তাররা হলেন– মো. হাসানুজ্জামান (৩৫) ও মো. আলমগীর শিকারী (৪৬)।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম শাখার একটি দল।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৩ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা প্রথমে তাবলিগ জামাত বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রোগ্রামের সূত্র ধরে লোকজনের সঙ্গে পরিচয় গড়ে তোলে এবং অভাবের কথা বলে টাকা নেওয়ার ফাঁদ পাতে। জামাল (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগী কাকরাইলে তাবলিগ জামাতের মারকাজ মসজিদে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুবাদে অভিযুক্ত সামসুল হক খানের (৫৬) সঙ্গে পরিচিত হয়। সামসুল প্রায়ই অভাবের কথা বলে জামালের কাছ থেকে টাকা নিত। গত ১৪ অক্টোবর জামাল খুলনায় ব্যবসার কাজে থাকাকালীন কল করে অসুস্থতার কথা বলে টাকা চান সামসুল। জামাল তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অপেক্ষা করতে বলে এবং খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার গোল চত্বরে সামসুলের সঙ্গে দেখা করে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে তাকে ২ হাজার টাকা দেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, পরে রাত ১১টায় রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে সামসুলসহ অজ্ঞাতনামা ৭ জন জামালকে ঘিরে ফেলেন। তারা সিআইডি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে জামালকে জোর করে গাড়িতে তোলেন এবং পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন। এসময় জামালের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক পার্টনার রেজাউল করিমও ছিলেন। এরপর অপহরণকারীরা তাদের ঢাকার হাসনাবাদের একটি ৬ তলা বাড়ির ৬ষ্ঠ তলায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাদের কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হলে তারা জামালকে মারধর শুরু করেন। এতে তিনি ভয় পেয়ে তার সঙ্গে থাকা নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করে মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দেন। অপহরণকারীরা তার ব্যবসায়িক বন্ধু রেজাউল করিমের কাছ থেকেও ২৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
সিআইডির মুখপাত্র আরও বলেন, পরে অপহরণকারীরা জামালকে বিবস্ত্র করে একটি ২৫-৩০ বছরের মহিলার সঙ্গে বসিয়ে ভিডিও ও স্থির ছবি ধারণ করে এবং ১৮টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। ঘটনা ১৪ অক্টোবর রাত ১১টা থেকে ১৫ অক্টোবর বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। এরপর এ ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই অপহরণকারীরা ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না করার বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করে এবং না দিলে মিথ্যা মামলা দায়ের ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভিকটিম গত ৬ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেলে তদন্তের একপর্যায়ে এই দুইজনকে গতকাল (শনিবার) গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সিআইডি কাজ করছে।
এমএসি/এসএসএইচ