সড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষে বাস-ট্রাক এসে পড়ল খালে/ ফাইল ছবি

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০-এ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে চার দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

গতবছর সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ও এতে প্রাণহানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সড়ক দুর্ঘটনা ও এতে প্রাণহানি সবচেয়ে কম হয়েছে সিলেট বিভাগে। 

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।

সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ৭৩৫টি। এতে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৩১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৭১, শিশু ৬৪৯ জন। এক হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪৬৩ জন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫১২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দুর্ঘটনায় বাস যাত্রী ২৬১ জন (৪.৮০ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান যাত্রী ৩৫০ জন (৬.৪৪ শতাংশ), ট্রলি-লরি-ট্রাক্টর যাত্রী ৯৪ জন (১.৭৩ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপের যাত্রী ২৭৫ জন (৫.০৬ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-মিশুক-তেম্পু) ৮৭৪ জন (১৬.০৯ শতাংশ), নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-বোরাকের যাত্রী ৪৬১ জন (৮.৪৮ শতাংশ), বাইসাইকেল আরোহী ৪৯ জন (০.৯০ শতাংশ), টমটম-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান যাত্রী ৮৪ জন (১.৫৪ শতাংশ), এবং পাওয়ার টিলারের পাঁচ জন, ইট ভাঙ্গার গাড়ির তিন জন শ্রমিকসহ ১৭ জন (০.৩১ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এক হাজার ৮১১টি (৩৮.২৪ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, এক হাজার ৬০৫টি (৩৩.৮৯ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১৭টি (১৩.০৩%) গ্রামীণ সড়কে, ৬৪৪টি (১৩.৬০ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে (ফেরিঘাট, নদীর তীর, ফসলের মাঠ, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ মাঠ) ৫৮টি (১.২২ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর এক হাজার ১১৪টি (২৩.৫২ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক হাজার ২৫৫টি (২৬.৫০ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, এক হাজার ৫৭৩টি (৩৩.২২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৭০৯টি (১৪.৯৭%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৮৪টি (১.৭৭ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা সাত হাজার ১৬৮টি। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.২৩ শতাংশ, সকালে ৩২.৮৮, দুপুরে ১৪.৩৬, বিকেলে ২০.০৪, সন্ধ্যায় ৯.৭৫ এবং রাতে ১৭.৭১ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৫.৫২ শতাংশ, প্রাণহানি ২৫.০৮ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৫৭, প্রাণহানি ১৫.১৯ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৮৬, প্রাণহানি ১৩.৬৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১১.৭৮, প্রাণহানি ১১.৭৭ শতাংশ; ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.১৯, প্রাণহানি ১০.৭৬ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১১, প্রাণহানি ৮.১১ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.০৪, প্রাণহানি ৮.৪১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৮৮ ও প্রাণহানি সাত শতাংশ ঘটেছে।

অর্থাৎ ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম মেহেরপুর জেলায়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রাজনীতির ধারাবাহিক চর্চার কারণে গড়ে উঠেছে। এখানে অনেকগুলো কারণ জড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গত বছর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই মাস দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল, মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল- এরপরও দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ না থাকলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ব্যবধান আরও বেশি হতো বলে আমাদের ধারণা।’

পিএসডি/এফআর