শীতও কম, ফুটপাতে গরম পোশাকের বিক্রিও কম
দিনের বেলা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই রাজধানীতে হালকা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তবে এই ঠান্ডা এখনো জ্যাকেট বা ভারী শীতবস্ত্র পরার মতো তীব্র হয়নি। এমন আবহাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতজুড়ে এখন শীতবস্ত্রের অস্থায়ী দোকান বসে গেছে। পুরোপুরি শীত নামার আগেই ফুটপাতের বিক্রেতারা আগেভাগে তাদের এই মৌসুমি দোকান সাজিয়ে নিয়েছেন।
ব্যস্ত নগরীর মোড়, বড় বড় মার্কেটসংলগ্ন পথ, ফ্লাইওভারের নিচে, গলিপথ সব জায়গাতেই এখন চোখে পড়ে অস্থায়ী দোকান। জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, টুপি, গ্লাভসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের শীতের কাপড় সাজানো আছে তাদের ভ্যান, কাঠের ট্রলি স্টিলের গোল আলনাতে। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত ক্রেতা সবার পদচারণাই চোখে পড়ে এসব দোকানে।
বিজ্ঞাপন
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় শীত এখনো শুরু হয়নি। তাই বিক্রি হালকা-পাতলাই চলছে। গত একমাস ধরেই তারা শীতের কাপড় সাজিয়েছেন। অফিসগামী অনেকেই পথে যেতেই দেখে কিনে নিচ্ছেন আবার কেউ শুধু দেখে চলে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার দিকে চাকরিজীবীদের ভিড় তুলনামূলক বেশি থাকে বলে জানান তারা। বড় মার্কেটে দামের চাপ থাকায় ফুটপাতেই এসব ক্রেতার প্রথম পছন্দ। কারণ এখানে সাশ্রয়ে পাওয়া যায় দৈনন্দিন ব্যবহার্য শীতবস্ত্র।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাত ও সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে এসব দোকান বসেছে। ছোট-বড় সব বয়সিদের শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এখানে। মান ও ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে এসব পোশাকের দাম ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
দেখা যায়, হাঁটতে থাকা পথচারীদের কেউ কেউ হঠাৎ থেমে দুই-একটি পোশাক হাতে নিয়ে দেখছেন। পছন্দ হলে দাম বলছেন। ক্রেতার চাহিদা ও বিক্রেতার দামের মিল হলে বিক্রি হচ্ছে এসব পোষাক। না হলে সেই পথচারী আবার সামনে এগিয়ে পরের দোকানে যাচ্ছেন।
খিলগাঁওয়ের শহীদ বাঁকি সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান সাজিয়েছেন রিয়াজ। আগে তিনি প্যান্ট বিক্রি করতেন, এখন গত একমাস ধরে শীতের কাপড় বিক্রি করছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এগুলো তো সিজনাল ব্যবসা। দুই-তিন মাস পরপরই সিজন অনুযায়ী কাপড় বদলাতে হয়। শীতের কাপড় গত একমাস ধরেই হালকা-হালকা বিক্রি হচ্ছে। তবে যে রকম শীত পড়লে লোকজন বেশি কিনতে আসে, সে রকম ঠান্ডা এখনো তৈরি হয়নি।
শিশুদের পোশাকের দোকান সাজিয়েছেন জিসান। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার এখানে ছোটদের কাপড় ২০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় অনেকেই তাদের বাচ্চাদের জন্য এখান থেকে কাপড় কিনেন। প্রতিদিনই কিছু না কিছু বিক্রি হয়। ঠান্ডা এখনো ভালোভাবে পড়েনি। আর ১০-১৫ দিন গেলে বিক্রি আরও বাড়বে মনে হয়।
এখানেই ছোট মেয়ের জন্য জাম্পার কিনছিলেন হামিদ। তিনি বলেন, ছোট মেয়েটার জন্য একটা জাম্পার কিনলাম। এখানে কম দামের মধ্যেই ভালো কাপড় পাওয়া যায়। অনায়াসে এক সিজন পার হয়ে যায়।
শীতের ট্রাউজার কিনতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, এখানে আড়াইশো-তিনশো টাকায় ট্রাউজার পাওয়া যায়। এখন যদি দু’টা কিনে নেই, তাহলে পুরো শীতই চলে যাবে। ফুটপাত বলে যে একেবারে খারাপ কাপড়, তা কিন্তু না।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠান্ডা পুরোপুরি না নেমে এলেও অনেকেই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কিছু শীতের কাপড় কিনে রাখছেন, যেন হঠাৎ ঠান্ডা পড়লে তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে না হয়। তাদের মতে, এখন দাম তুলনামূলক কম, তাই আগেভাগেই কিনে নেওয়াই সুবিধাজনক।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়া আরও ঠান্ডা হলে ফুটপাতের এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিক্রি আরও জোরেশোরে শুরু হতে পারে, আর তখনই আসল মৌসুমি জমজমাট অবস্থা দেখা যাবে।
এমএইচএন/এমএন