আইনজীবী হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান শাকিবা হাসান তুশমি
শাকিবা হাসান তুশমি। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। বাবা এম এম শাব্বির হাসান দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত রয়েছেন। মা সাবিহা সুলতানা বর্না একজন ব্যবসায়ী। তুশমি আইনে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ব্যারিস্টার হতে চান। সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করতে চান। নিজের আত্মপরিচয় সৃষ্টি করে রাজনীতিতেও নাম লেখাতে চান এই তরুণী।
নিজের পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে তুশমি বলেন, ২০০২ সনের ৭ ডিসেম্বর চাঁদপুরে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবা এম এম শাব্বির হাসান দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত আছেন। আমার মা সাবিহা সুলতানা বর্না একজন ব্যবসায়ী ও গৃহিণী। তাছাড়া তিনি (আমার মা) দীর্ঘদিন যাবৎ সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছেন। আমরা দুই বোন। আমার ছোট বোন সাবাবা হাসান রাইহা বর্তমানে স্কলাস্টিকা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আমার প্রয়াত দাদা একজন সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা ছিলেন এবং আমার দাদি একজন গৃহিণী ছিলেন। আমার নানা চাঁদপুর জেলার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী। নানী একজন গৃহিণী।
বিজ্ঞাপন
লেখাপড়ার বিষয়ে শাকিবা তুশমি বলেন, বাবার পেশাগত কারণে বিভিন্ন জেলায় বসবাসের পর ২০০৬ সনে আমরা ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। ওই বছরেই আমি স্কলাস্টিকা স্কুলে হাতে খড়ি নেই। আমি ২০২০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ‘ও-লেভেল’ এবং ২০২২ সালে ‘এ-লেভেল’ সম্পন্ন করে স্কলাস্টিকা থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি। সম্প্রতি আমি লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ বা এলসিএলএস (ন) এর মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে এলএলবি (অনার্স) সেকেন্ড ইয়ার সম্পন্ন করেছি।
বিজ্ঞাপন
নিজের আইন পড়ার কারণ নিয়ে এই তরুণী বলেন, ছোটোবেলা থেকে আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল বড় হয়ে একজন অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের প্রতি আমার ঝোঁক সৃষ্টি হয়। ন্যায় বিচার না পাওয়ার কারণে আমি অনেক পরিবারকে অসহায় হতে দেখেছি। তাছাড়া, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার কারণে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দেশের বিশিষ্টজনদের টার্গেট করার বিভিন্ন ঘটনাও আমি প্রত্যক্ষ করেছি। তাই আমি সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। সে থেকেই আমার ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আইন পড়ছি।
পড়ালেখার পাশাপাশি বই পড়তে পছন্দ করেন তুশমি। তিনি বলেন, বই পড়া ছাড়াও লেখালেখিরও অনেক শখ আছে আমার। স্কুল জীবনে আমি স্কুল ম্যাগাজিনে অনেক আর্টিকেল লিখেছি। এখনো সময় পেলেই লেখালেখি করি। এবিষয়ে আমার মা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আমি আমার ইউনিভার্সিটির অ্যাডভোকেসি ক্লাবের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। অ্যাডভোকেসি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় আমি বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন, মুড কোর্ট পরিচালনা ও অ্যাডভোকেসি কমপিটিশনের আয়োজন করি এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজেও অংশগ্রহণ করে থাকি।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তুশমি বলেন, ‘আমি আইন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে চাই এবং পরিবারকে গর্বিত করতে চাই। কাজের মাধ্যমে আমি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আইনের সমান সুযোগ লাভের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে চাই। আইন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হলে আমার রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে। কেননা, আইন পেশার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইনকে মান্য করার জন্য এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একজন আইনজীবী বা ব্যারিস্টার সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। তাই মানবিক ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এবং অন্যায়ের শিকার ব্যক্তিকে আইনি ব্যবস্থার আওতায় ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আমি বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষকে নিঃস্বার্থ সহযোগিতা করা আমার আইন পড়ার অন্যতম উদ্দেশ্য। নারীদের নিয়ে তুশমি বলেন, আমি মনে করি, একজন নারীর-শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে আত্মপরিচয় সৃষ্টি করা এবং উপার্জনে অংশগ্রহণ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন।
জীবনের স্মরণীয় ঘটনা নিয়ে শাকিবা তুশমি বলেন, ছোটোবেলায় আমি কিছুটা মৃদুভাষী ছিলাম। সাহস সঞ্চার করে একবার আমি একটি আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি ঘাবড়ে যাই। তখন একজন বিচারক কিছু অনুপ্রেরণামূলক কথা বলে আমাকে উৎসাহিত করেন। তখন হঠাৎ আমার মধ্যে এক ধরনের আত্ম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং আমি নির্দ্বিধায় আমার সাবলীল বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে সক্ষম হই। এরপর আমি বহু আন্তঃস্কুল ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আমার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হই। কিন্তু আজও আমার অন্তরে ছোটোবেলার সেই দিনকার ঘটনা দাগ কেটে আছে। কেননা, সেটাই আমার আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টির মূল পটভূমি।
এমএইচডি/এসএম