জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়াটি দ্রুত অনুমোদনের জোর দাবি জানিয়েছে উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) ও তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট)।

রোববার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তামাকের ভয়াল থাবা থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা এবং অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিদ্যমান আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা জরুরি। তামাকের ধোঁয়ায় প্রায় ৭০০০ ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। টোব্যাকো অ্যাটলাস (২০২২) অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত।

আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীর লালায় নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটি পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহ বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি তারা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত খসড়া আইনে তামাক নিয়ন্ত্রণে যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, উবিনীগ ও তাবিনাজ সেগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য উৎপাদন-আমদানি-বিক্রি নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বৈশ্বিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে বাংলাদেশে নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে এই অনুমোদন বাতিলের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উবিনীগের পরিচালক সীমা দাস সীমু, তাবিনাজের সদস্য শারমিন কবির বীনা, স্বাস্থ্য আন্দোলন নেটওয়ার্কের সদস্য আমিনূর রসুল, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগমসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা।

এমএইচএন/এমএন