ফাইল ছবি

‘বনসাই’ দশা থেকে টেলিকম খাতকে বের করে এনে পূর্ণাঙ্গ সার্ভিসভিত্তিক শিল্পে রূপান্তরের উদ্যোগ চলমান বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, বছরের পর বছর কানেক্টিভিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্তরের বাধা, রেন্ট সিকিং ও প্রযুক্তি-অবরোধে টেলিকম সেক্টর ইনোভেশনহীন হয়ে পড়েছিল।

রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) পরীক্ষামূলকভাবে এমভিএনও (মোবাইল ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর) নেটওয়ার্ক চালুর অনুমোদন পেয়েছে। বিটিসিএলের দল এমভিএনও চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দ্রুতই এ উদ্যোগের পাইলট কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সব ধরনের টেকনোলজি আনব্লকের উদ্যোগ নিয়েছি। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ফাইভ-জি। ভোল্টে (VoLTE) রোল আউট শুরু হয়েছে পুরোদমে। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই লঞ্চ হয়েছে। শুরু হচ্ছে প্রাইভেট ফাইভ-জি। আমি আশা করি, দ্রুতই লার্জ পাবলিক ইনডোর, স্মল সেল, নেটওয়ার্ক স্লাইস এবং হট স্পটের মতো টেলিকম সার্ভিসগুলোও শুরু হবে। নতুন পলিসিতে এসব প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ৭০০ মেগাহার্জের অকশনও ডাকা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, কানেক্টিভিটিকে কেন্দ্র করে টেলিকম খাতকে জিম্মি করে রেখেছে প্রায় সব লেয়ারের মাফিয়ারা সজ্ঞানে ও অজ্ঞানে। আওয়ামী লীগ টেলিকম কানেক্টিভিটিকে ব্যবহার করেছে টোল প্লাজা হিসেবে। আমরা চাই কানেক্টিভিটি হাইওয়েতে কোনো টোল প্লাজা থাকবে না। অতি সামান্য বিনিয়োগ করে কেউ বিশাল ইকোসিস্টেম এবং ইনভেস্টমেন্ট সার্কেলে রেন্ট সিকিং করতে পারবে না। এজন্য আমরা ফাইবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি ও দিচ্ছি, যাতে অ্যাক্সেস টু ফাইবার এবং বাল্ক ডেটা ফ্লোতে কোনো অবকাঠামোগত বাধা না আসে।

প্রত্যাশা জানিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের কানেক্টিভিটি নির্ভর টেলিকম ধীরে ধীরে ডিজিটাল সার্ভিস বেজড ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হবে। যেখানে এড-টেক, এগ্রো-টেক, গভ-টেক, ফিন-টেক, হেলথ-টেক, স্টার্টআপ, ওটিটি বেজড ডিজিটাল সার্ভিসের অমিত সম্ভাবনা তৈরি হবে। টেলিকম ও ইন্টারনেট-কানেক্টিভিটিতে পড়ে থাকায় দেশের ডিজিটাল সার্ভিস ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখানে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের বাজার এখনো এমবি বা জিবি কেন্দ্রিক। অথচ দরকার ছিল সেবা কেন্দ্রিক, যেখানে বেসিক প্যাকেজের ওপর শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, সেবা গ্রহীতার জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ থাকবে, থাকবে স্পোর্টস ও এন্টারটেইনমেন্ট প্যাকেজ, থাকবে সিকিউর ইন্টারনেট প্যাকেজ, আইওটি, মিশন ক্রিটিক্যাল কমিউনিকেশন, ইন্ডাস্ট্রি ক্রিটিক্যাল কমিউনিকেশন কিংবা গেমিং কিংবা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিংবা কমপিউটিং সার্ভিস। তারা আমাদের বামন করে রেখেছিল।

তিনি বলেন, নতুন ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্স পলিসি ২০২৫’ কানেক্টিভিটি থেকে সার্ভিসে রূপান্তরের ফিলোসফিতেই গড়ে তোলা হয়েছে। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রির সব প্লেয়ারকে সার্ভিসে মাইগ্রেট করাই গ্র্যান্ড ডিজাইন। টেলিকমকে কানেক্টিভিটি ব্যবসায় সীমাবদ্ধ করে আওয়ামী লীগ এই ইন্ডাস্ট্রিকে একটা ইনোভেশনহীন, নলেজহীন এবং সার্ভিস লিমিটেড বনসাই করে রেখেছিল। এই বামন দশা থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত সাফল্য হবে যখন আমরা ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ইন্টারকানেক্টিভিটি এবং ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি লেয়ার কেন্দ্রিক ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট, ন্যাশনাল এপিআই এক্সচেঞ্জ এবং সেক্টরাল ইন্টার-অপারেবিলিটি এক্সচেঞ্জ প্রজেক্টগুলো শেষ করতে পারব। আবার ডেটা ওশান এবং ডিজিটাল সার্ভিস ইকোসিস্টেমে ব্যক্তিগত উপাত্ত ও গোপনীয়তা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে আমরা করেছি বাংলাদেশের প্রথম ‘পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ এবং ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অর্ডিন্যান্স ২০২৫’। সবমিলিয়ে এক মহাযাত্রার শুরুটা আমরা (বর্তমান সরকার) করে দিয়ে যাচ্ছি।

আরএইচটি/এসএসএইচ