সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৬০ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, কঠোর অবস্থানে বিআরটি
নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে এখন থেকে ৬০ ঘণ্টার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আইন যতই হালনাগাদ করা হোক, বাস্তবায়ন না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। মালিক–শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবাইকে এই পরিবর্তন গ্রহণ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
এসময় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কুইক রেসপন্স সিস্টেম গড়ার ঘোষণাও বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে সড়ক নিরাপত্তা আইন : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
এসময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তার নিজের মেয়ের জামাই একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুই দফা অপারেশন করা হয়েছে, এখনো হাঁটতে পারেন না। চেয়ারম্যানের ভাষ্য, “যিনি বেঁচে যান, তার কষ্ট অনেক বেশি। এই জায়গা বোঝার পরই উপলব্ধি করেছি— দুর্ঘটনার পরপর দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে ক্ষতির গভীরতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”
এ কারণেই তিনি অবিলম্বে একটি কুইক রেসপন্স সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। দুর্ঘটনার পর প্রথম ৩০–৬০ মিনিটকে “হিস্টরি-চেঞ্জিং টাইম” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; নইলে মৃত্যু ও অক্ষমতা দুটোই বেড়ে যায়।
আইন আছে, বাস্তবায়ন নেই : বড় বাধা মালিক–শ্রমিক চাপ
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, দেশে মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স থাকলেও ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। আইন অনুযায়ী একজন চালক সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে চালকরা ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্টিয়ারিং ধরে থাকেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।
তিনি স্বীকার করেন, পুলিশের সক্ষমতা সীমিত; তবে শুধু পুলিশ নয়, সমন্বিত ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই বদলানো যাবে না। মালিক, শ্রমিক, স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক খাতের সব সংস্থা এবং জনগণ— সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি সাহায্য—অপরিচিত একটি সুযোগ
চেয়ারম্যান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকার ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেয়— মৃত্যু হলে ৫ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ব হলে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা।
তবে এই অর্থ পেতে হলে দুর্ঘটনার পরপরই নিকটস্থ বিআরটিএ অফিসারকে জানাতে হবে অথবা নির্ধারিত ফর্ম জমা দিতে হবে। অনেক সংস্থা ছয় মাস সময় নেয়— এটি অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নতুন চালক গড়ার পরিকল্পনা: মাস্টার ট্রেইনার ও গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড
বিআরটিএ একটি মাস্টার ট্রেইনার পুল তৈরি করছে, যারা সারা দেশের ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে নতুন ৬০ ঘণ্টার কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেবেন।
চেয়ারম্যান বলেন, “শুধু লাইসেন্স না; সড়কে নামার আগে চালকের ভেতরে ন্যূনতম দক্ষতা এবং আচরণগত পরিবর্তন আনতেই হবে।”
তিনি মনে করেন, দেশের ৫–২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা (৩২%) আগামী অর্থনীতির মূল শক্তি। সড়কে প্রতিদিন তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়লে অর্থনৈতিক টেকঅফ অসম্ভব। তাই সড়ক নিরাপত্তাকে তিনি জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের জায়গায় দেখতে চান।
টিআই/এসএম