নৈতিকতার চর্চা বাড়লেই কমবে নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা : চট্টগ্রাম ডিসি
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, নারী ও কন্যাশিশুসহ সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের ওপর যারা নির্যাতন চালায়, তারা আমাদেরই সমাজের অংশ, কোনো না কোনো পরিবারের মানুষ। তাই শুধু আইন প্রয়োগ বা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ভালো কথা বললেই সহিংসতা বন্ধ হবে না; প্রয়োজন নিজের জীবনে নৈতিকতা চর্চা এবং চরিত্রের পরিবর্তন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে আয়োজিত র্যালি ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উদ্যোগে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন– জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম এবং জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোছলেহ উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
র্যালি ও আলোচনা সভায় সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ ও প্রশিক্ষণার্থীরা অংশ নেন। মুক্ত আলোচনায় ব্রাক, ইপসা, প্রত্যাশী, ইলমা, কারিতাস, সিডিসি, উষা নারী উন্নয়ন সংস্থা, ওয়াইএএসডি, যুগান্তর, ঘাসফুল, বিটা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা অনলাইনে নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধি, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয় করা, প্রতিবন্ধী নারী ও প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং পারিবারিক সহিংসতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অংশগ্রহণকারীরা গত দশ মাসের সহিংসতার নানা পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক শিক্ষা ও সমাজজুড়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সব বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নারীর স্বাবলম্বিতা অর্জনে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জেলে তিন হাজারের বেশি মাদক মামলার আসামি শাস্তিভোগ করলেও সমাজ থেকে মাদক কমছে না– এ থেকেই বোঝা যায়, কেবল আইন প্রয়োগে অপরাধ কমে না। প্রত্যেকে যদি নিজ জীবনে নৈতিকতা চর্চা করেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখান, তবে সমাজে সহিংসতা কমবে। তিনি নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবার, নিরাপদ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে গণ পরিবহনে নারীর প্রতি যেকোনো সহিংস ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। তিনি পরিবারের অভ্যন্তরীণ সংকটকে নারীর ওপর চাপিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন এবং নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এমআর/বিআরইউ