এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের পানি নিরাপত্তা এক নতুন হুমকির মুখে। পরিবেশের দ্রুত অবনতি এবং অর্থায়নের বড় ঘাটতি এই অগ্রগতিকে ম্লান করে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ‌‘এশীয় পানি উন্নয়ন আউটলুক ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১২ বছরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ, যা প্রায় ২.৭ বিলিয়ন লোকের সমান চরম পানি নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে।

এডিবি প্রতিবেদনে জানায়, গত ২০১৩ সাল থেকে নতুন রাজনৈতিক অঙ্গীকার, লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ এবং সুশাসনের সংস্কার এই সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি। এর ফলে ৮৪০ মিলিয়ন মানুষ উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবা পাচ্ছেন। চীনের সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের মাধ্যমে দুর্যোগ সহনশীলতা বাড়িয়েছে। এছাড়া কম্বোডিয়া, লাওস এবং তাজিকিস্তানেও নিরাপদ পানীয় জল এবং জলবায়ু দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে, এই কঠোরভাবে অর্জিত সাফল্য এখন হুমকির মুখে।

এডিবি জানায়, জলাভূমি, নদী, জলজ স্তর এবং বন, যা দীর্ঘমেয়াদি জল নিরাপত্তার উৎস, তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো অঞ্চলটিকে আরও ঝুঁকিতে ফেলছে। বিশ্বের মোট বন্যার ৪১ শতাংশ ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলে ঘটে। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কেবল ওয়াসা চাহিদা মেটানোর জন্য ৪ ট্রিলিয়ন প্রয়োজন। যা বছরে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন। এডিবির হিসাবে, বর্তমানে ওয়াসা অবকাঠামোতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা বার্ষিক প্রয়োজনীয় ২৫০ বিলিয়নের ৪০ শতাংশেরও কম। এর ফলে প্রতি বছর ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি থাকছে।

এডিবির পানি ও নগর উন্নয়ন বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর নোরিও সাইতো বলেন, এশিয়া পানির গল্প দুটি বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, পানি নিরাপত্তায় স্মারক সাফল্যের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এই অগ্রগতিকে দুর্বল করতে পারে।

তিনি বলেন, পানি নিরাপত্তা ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদনটি দেখায় যে, আমাদের ইকোসিস্টেমের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার, স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালীকরণ, জলের সুশাসন উন্নত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি জল সুরক্ষার জন্য, বিশেষ করে সবচেয়ে অভাবী সম্প্রদায়গুলোর জন্য, উদ্ভাবনী অর্থায়ন জরুরিভাবে মোতায়েন করতে হবে।

এশীয় পানি উন্নয়ন আউটলুক ২০২৫-এর সুপারিশ অনুযায়ী, পানি পরিষেবাগুলোকে আরও কার্যকর ও টেকসই করতে, বিনিয়োগের ঘাটতি পূরণ করতে এবং সুশাসন জোরদার করতে সরকার, বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন অংশীদারদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রতিবেদনের প্রধান সুপারিশগুলো হলো— প্রকৃতির সুরক্ষা, সুশাসন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনী অর্থায়ন।

এসআর/এমএন