হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে রোগীর চাপ বেড়েছে।

দেশে কোনোভাবেই থামছে না করোনাভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন জেলায় চলছে বিধিনিষেধ ও লকডাউন। তারপরও শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখীই আছে। 

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সবশেষ কয়েকদিনে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। রোগীর চাপ বেড়েছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে। সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে এসব হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী জানিয়েছেন, নগরীর জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বিভাগের একটি বেডও খালি নেই। মা ও শিশু হাসপাতালের চিত্রও একইরকম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র তিনটি। তবে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি আছে। 

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে আইসিইউর চেয়ে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বেশি দরকার। আমাদের হাসপাতালগুলোতে এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট ২) ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে এগুলো চালু করা হবে।

এবার গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, মে মাসের চেয়ে জুনে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি। মে-তে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫১৫ জনের শরীরে। জুনের ২৪ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ জন। সংক্রমণের মাত্রা বলছে, এই মাস শেষে আগের মাসের চেয়ে সংখ্যাটা অনেক বেশি দাঁড়াবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শনাক্তের হার ২৮.০৭ শতাংশ।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৫ দিনে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগেরই আইসিইউ দরকার পড়ছে। তাই এই বিভাগটিতে তুলনামূলক বেশি চাপ দেখা যাচ্ছে।

আইসিইউ প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। করোনা ইউনিটে মোট ৮২ জন নতুন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড আছে। বর্তমানে সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। তাই অনেক রোগীর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট জরুরি হলেও আমরা দিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ১৫ দিন আগেও রোগীর চাপ কম ছিল। তখন প্রতিদিন ৩-৪টি আইসিইউ বেড খালি থাকত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) পর্যন্ত আইসোলেশন ইউনিটে ৬৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। যেখানে ১০ দিন আগেও রোগী ছিল ৪০ জনের মতো।

সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ঈদের সময় জনসমাগম বেশি ছিল। এসব কারণে হতে পারে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭১ জন। হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১০টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৭টি বেডে।

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, কোভিড ইউনিটের ৩২টি শয্যার মধ্যে ২৮টিতে রোগী ভর্তি আছেন। সরকারি এই হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা চালুর কথা রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আইসিইউ শয্যা চালু হবে বলে আশা করছি। এখানে ৫ বেডের আইসিইউ ইউনিট চালু করা হবে।

বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৭৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। আইসিইউ বেড আছে ১৬টি, সবগুলোতে রোগী ভর্তি। কখন একটি আইসিইউ বেড ফাঁকা হবে তার অপেক্ষায় থাকেন অনেক রোগী। 

এদিকে সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে করোনা ইউনিটের সবগুলো বেডে রোগী আছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম পার্কভিউর আইসিইউ ইউনিটেও বেড খালি নেই।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রস্তুত আছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে। চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ১০৭টি আইসিইউ বেড আছে। এগুলোর অর্ধেকে রোগী ভর্তি আছে, বাকিগুলো খালি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে।

বয়স্কদের করোনা ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বয়স্ক কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। দেরি করলেই বিপদ।

সংক্রমণ বাড়লেও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, মাস্ক ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছেন।

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা বাড়ছে দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কোনো নির্দেশনাই মানুষ মানতে চায় না। ফলে সংক্রমণের হার আবারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে এবার গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২৭৪ জন। শনাক্তের হার ২৮.০৭ শতাংশ।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ১৫৪ জন। শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৪ হাজার ৭৮৭ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১২ হাজার ৩৬৭ জন রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ৬৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৬ জন চট্টগ্রাম নগরীর। আর বিভিন্ন উপজেলায় মারা গেছেন ২০৫ জন।

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এরই মধ্যে অতি সংক্রমণশীল এলাকা হিসেবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলাকে বুধবার (২৩ জুন) সকাল থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ লকডাউন জারি থাকবে। আর মহানগরে রাত ৮টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সংক্রমণ রোধে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসন।

কেএম/এমএইচএস/এইচকে/এসকেডি