মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জলবায়ু সংকটের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা শব্দটি আর যথেষ্ট নয়— এখন প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তা এখন আর শুধু পরিবেশগত বিষয় নয়, এটি একটি মানবাধিকার ইস্যু।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

সম্মেলনের শুরুতে পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স দেওয়ার কথা বলা হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়, যা একটি স্পষ্ট অবিচার। আমরা যে ক্ষতির শিকার, তা আমাদের দোষে নয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কেন ঋণ নিতে হবে?

উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর পরিবর্তন নয়, এটি একটি দুর্যোগ। শিল্পায়নকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা এই দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র প্রায় ০.৪ শতাংশের জন্য দায়ী, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে।

উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করে আমাদের অনেক সময় বিভ্রান্ত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়। খুব সহজভাবে ‘নেট জিরো’ বলা হয়, কিন্তু ‘নেট জিরো’ বলে আসলে কিছু নেই। ‘জিরো’-এর আগে ‘নেট’ বসার অর্থ হলো একটি প্লাস ও একটি মাইনাসের সমন্বয়, যেখানে কার্বন নিঃসরণ একদিকে বাড়তে পারে এবং অন্যদিকে কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। আমাদের প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে জিরো কার্বন, কোনো বিভ্রান্তিকর শব্দ নয়। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ধোঁকা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘নেচার বেইজড সল্যুশন’ শব্দটিও আজ বিভিন্ন কর্পোরেট স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বসবাস ও সমাধান খোঁজার যে অভিজ্ঞতা জনগণের ছিল, সেটিকে এখন নানা প্রযুক্তি ও কৃত্রিম ধারণার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা প্রকৃত অর্থে নেচার বেইজড নয়।

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের হাওর, বাঁওড়, ওয়েটল্যান্ড ও বিভিন্ন জলাশয় আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে এসব জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে ইলিশের দাম বাড়লে আমরা প্রতিবাদ করি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকটের কারণে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল— সমুদ্র থেকে নদীতে আসা এবং নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে—সে বিষয়ে আমরা খুব কমই কথা বলি।

উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে কম দায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারির ভুক্তভোগী দেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রন্টলাইন দেশ। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ধনী দেশগুলোর কাছে ঋণী নই। বরং জলবায়ু ক্ষতির দায় তাদেরই নিতে হবে। ন্যায্যতা মানে এখন জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপ।

সম্মেলনের আহ্বায়ক এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী ফোরাম–এর সাধারণ সম্পাদক ও ধরা –এর সদস্য সঞ্জীব দ্রং।

সম্মেলনে বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ১৪টি দেশের পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতারা অংশ গ্রহণ করেন।

এসএইচআর/জেডএস