বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ২৪৫ কোটি টাকার আয় এবং কার্যকর খরচ নিয়ন্ত্রণের ফলে কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়, যা বিএসসিএলের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক।

বিএসসিএল এর আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবচয়জনিত ব্যয় (উৎপাদনে ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পদ ক্ষয় বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে দামের অবনতি), অপারেশন ব্যয়, কর, শ্রমিক কল্যাণসহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। ফলে চূড়ান্ত হিসাবে নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) ধারাবাহিক লোকসান ছিল স্বাভাবিক চিত্র। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সময় আয়ের বড় অংশ নির্ভর করছিল অবিক্রিত ক্যাপাসিটির বিক্রির ওপর। তবে শুরুতে সেই চাহিদা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও টেলিযোগাযোগ খাতে স্যাটেলাইট–নির্ভর সেবার ব্যবহার বাড়লেও তা ধীরগতিতে হচ্ছিল। ফলে অবিক্রিত ক্যাপাসিটি পড়ে থাকা এবং আয়ের ঘাটতি বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানকে চাপিয়ে রাখছিল। সম্প্রতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিএসসিএল এই বাঁধাগুলো অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। 

নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সবার প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যমান গ্রাহকদের সঙ্গে কার্যকর চুক্তি ও সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি গ্রহণ করে। যাতে ক্যাপাসিটি ব্যবহার সর্বাধিক হয়। একইসঙ্গে সম্প্রচারমাধ্যম ও টেলিকম খাতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও করা হয়েছে, যা নিয়মিত আয় নিশ্চিত করেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের কাজও শুরু হয়েছে। সীমিত কিন্তু লক্ষ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গ্রাহক ধরে রাখার উদ্যোগ এবং নতুন গ্রাহক আনার ফলে এতদিন ধরে অবিক্রিত ক্যাপাসিটির বিক্রি বেড়েছে।

দীর্ঘ চেষ্টার পে বাজার সম্প্রসারণ এবং খরচ নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়ে অবিক্রিত ক্যাপাসিটির বিক্রি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। আর এতে করেই ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিএসসিএল প্রথমবারের মতো ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করতে পেরেছে

এছাড়া বিজ্ঞাপন ও ব্রডকাস্ট সেবা, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলে কভারেজ দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় ও সরকারি প্রকল্পে সেবা প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের নতুন উৎস তৈরি হয়েছে। আর প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি মূল্য কাঠামো সমন্বয় করে গ্রাহকরা সহজেই সেবা নিতে পারছেন।

সবমিলিয়ে দীর্ঘ চেষ্টার পে বাজার সম্প্রসারণ এবং খরচ নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়ে অবিক্রিত ক্যাপাসিটির বিক্রি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। আর এতে করেই ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিএসসিএল প্রথমবারের মতো ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করতে পেরেছে।

বিএসসিএলের আরেকটি সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাণিজ্যিক বাজারেই নয়, সরকারি খাতেও তাদের সেবা সম্প্রসারণ করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাবিষয়ক যোগাযোগ এবং সরকারি বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পে স্যাটেলাইট ব্যবহার বাড়ায় রাজস্ব উৎসও বহুমুখী হয়েছে। ফলে আর্থিক ভিত্তি আগের তুলনায় আরও স্থিতিশীল হয়েছে।  

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইমাদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পটপরিবর্তনের পর আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর থেকেই বিএস-১ স্যাটেলাইটের অবিক্রিত ক্যাপাসিটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিই। সেই সঙ্গে বিদ্যমান গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই।

তিনি জানান, শুধু বাজার বিস্তারই নয় বরং খরচের বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমে এবং অপারেশন আরও কার্যকর হয়।

ড. ইমাদুর বলেন, কর্মীদের দক্ষতা, কর্মোদ্দীপনা ও পেশাদারিত্ব বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা চালানো হচ্ছে। এতে একদিকে মানবসম্পদ শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে গ্রাহকদের কাছে সেবার মান বজায় রাখা সহজ হয়েছে। আবার আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ খুঁজতে এবং বাস্তবায়ন করতে বেশ কিছু প্রকল্প চালু আছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট শিল্পকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণা ও সহযোগিতার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

আরএইচটি/এমএসএ