অনলাইনে প্রতারণামূলক উচ্চ সুদের ঋণদান বন্ধের দাবি টিক্যাবের
অনলাইনে অ্যাপস ব্যবহার করে র্যাপিড ক্যাশ, টাকাওয়ালা, স্বাধীন, ক্যাশ ক্যাশ, ক্যাশম্যানসহ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের অবৈধ, উচ্চ সুদ হারের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)। শনিবার (২৬ জুন) টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনলাইনে ঋণ বিতরণের এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেই, সরকারের অন্য কোনো দফতরেরও অনুমতি নেই। তারপরও দিনের পর দিন বিনা বাধায় প্রতারক চক্রগুলো গ্রাহকদের ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্ল্যাটফর্ম ভেদে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে তারা। ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, এনআইডি কার্ড, ছবি, পেশাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হলেও দেওয়া হচ্ছে না ঋণদাতার কোনো তথ্য। দুই হাজার টাকা ঋণ নিলে গ্রাহক পাচ্ছে ১৬৮৫ টাকা। নানা অজুহাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে ৩১৫ টাকা। বলা হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখা হয়। অর্থাৎ ২০০০ টাকা ঋণের বিপরীতে সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হচ্ছে ২০০৫ টাকা।
বিজ্ঞাপন
এতে বলা হয়, ঋণের পরিমাণ যত বেশি হয়, টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও তত বেশি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে প্রতিদিন ১২০ টাকা হারে চক্রবৃদ্ধিতে সুদ বাড়ে। বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যবহার করে এ ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। বেশিরভাগ প্লাটফর্মেরই কোনো অফিসের ঠিকানা নেই, অনেকের থাকলেও সেসব ভুয়া। গ্রাহদের হাজারো অভিযোগ থাকলেও অবৈধভাবে ঋণদানের এসব কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা অবিলম্বে এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজ্ঞপ্তিতে টিক্যাব ৫ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হচ্ছে— অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনহীন অনলাইনে ঋণ দেওয়ার এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে; বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে তারা যাতে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; এসব অ্যাপস ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে এ প্রচারণা ও তাদের অ্যাপস বন্ধ করা; প্রতারক চক্র যাতে হাতিয়ে নেওয়া গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপপ্রয়োগ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং উচ্চ সুদে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া বাড়তি অর্থ গ্রাহকদের ফেরত দিতে হবে এবং অবিলম্বে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুর্শিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজ সরল মানুষদের প্রতারণা করে তারা। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকে সেখানে এপ্লাই করে, ব্যক্তিগত তথ্য দেয়। অনেকে আবার প্রতারিতও হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকার বলছে, এ বিষয়ে তাদের কোনো অনুমোদন নেই। মানুষ প্রতারিত হলে কোথাও অভিযোগ করার সুযোগও নেই। তাই এ বিষয়গুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।’
এমএইচএন/এসএসএইচ