চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশমুখ বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় একটি চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ইয়াবাসহ আটক হওয়া ইমতিয়াজ হোসেন নামে এক পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জব্দ হওয়া ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবাও পরে গায়েব করে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ কক্সবাজার জেলা আদালতের এক বিচারকের গানম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে। তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাকলিয়া থানার ওসি-তদন্ত তানভীর আহমেদ ও তার সহযোগী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে।

সূত্র জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) এলাকায় বাকলিয়া থানা অংশে ঢাকাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বাসটি ওই দিন রাত ১০টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসে। তল্লাশির সময় সন্দেহভাজন হিসেবে ইমতিয়াজ হোসেন নামে এক যাত্রীকে আটক করে পুলিশ বক্সে নেওয়া হয়।

সূত্রের দাবি, তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে নয়টি বাক্সে মোট এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একপর্যায়ে আটক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকেয়া আক্তারের গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, পরিচয় জানার পর দরকষাকষির মাধ্যমে বাকলিয়া থানার ওসি-তদন্ত তানভীর আহমেদ ইয়াবাগুলো জব্দ না করে ইমতিয়াজ হোসেনকে ছেড়ে দেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে বাকলিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আল আমিন, দায়িত্বরত এএসআই সাদ্দামসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সের আরআই ইন্সপেক্টর আশরাফ আলী জানান, ইমতিয়াজ হোসেন ২০২২ সালের ১৩ জুলাই কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ইমতিয়াজ হোসেনের ব্যবহৃত একটি ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরের কল ও যাতায়াতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে তিনি একাধিকবার কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর ঢাকায় গিয়ে ১৭ অক্টোবর কক্সবাজার ফেরেন। এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকায় গিয়ে ১৭ নভেম্বর ফিরে আসেন। পাঁচ দিন পর আবার ২২ নভেম্বর ঢাকায় যান এবং ২৪ নভেম্বর কক্সবাজার ফেরেন। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকাগামী বাসে ওঠেন। এরপর চেকপোস্টে আটক হন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার আদালতে একসময়ে কর্মরত থাকা সায়েম নামে এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন ইমতিয়াজ। সায়েমও এক বিচারকের গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর সঙ্গে ইমতিয়াজের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এক বছর আগে সায়েমসহ দুই ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ আটক করে র‌্যাব খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কাছে হস্তান্তর করেছিল।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন, বাকলিয়া থানার ওসি-তদন্ত তানভীর আহমেদ, সেকেন্ড অফিসার এসআই আল আমিন ও এএসআই সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) আমিনুর রশিদ আজ সোমবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকেয়া আক্তার বলেন, ইমতিয়াজ হোসেন আমার গানম্যান, এ তথ্য ঠিক। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে আমি এখনো অবগত নই।

এমআর/এমজে