গণভোটে ‘‘হ্যাঁ’’ জয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই : টিআইবি
জুলাই সনদের আলোকে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করা এবং রাষ্ট্রসংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গণভোটে ‘‘হ্যাঁ’’ জয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যরা।
একই সঙ্গে জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু প্রতিপালন করবে এবং গণভোট বিষয়ে তাদের অবস্থান ইশতেহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বার্ষিক সভা শেষে এমন আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার সদস্যের অংশগ্রহণে বার্ষিক সভাটি সংস্থাটির ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হলেও জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সুপারিশ এবং আলোচনার বাইরে থাকা গণমাধ্যম, নারী, শ্রম, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো যেন বিস্মৃত না হয়, সে বিষয়েও ইশতেহারে অঙ্গীকার চায় টিআইবি।
বিজ্ঞাপন
টিআইবি সদস্যরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হলো কর্তৃত্ববাদের বিদায়ের পর জনমনে সৃষ্ট স্বাধীন মতপ্রকাশ ও ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ ও পেশিশক্তির প্রদর্শন যেন পুনরায় ফিরে না আসে, সে বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
ঘোষণাপত্রে ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সাম্প্রদায়িকতা রোধে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী-পুরুষসহ সকল জেন্ডার, প্রতিবন্ধী, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবিরের ওপর আক্রমণ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে টিআইবি সদস্যরা এসব ঘটনাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের সুপারিশ উপেক্ষা করে দুদক অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদনের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগ কার্যত নস্যাৎ করা হয়েছে। একইভাবে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশে মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সংস্কারবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবি সদস্যরা।
নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি জানায়, উগ্র ও নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর তৎপরতায় নারীদের চলাচল ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে, যা সামাজিকভাবে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া, তথ্য কমিশনকে কার্যকর করা, পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা, অর্থপাচার প্রতিরোধ জোরদার করা এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।
মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আরএম/এমজে