বিদায় ২০২৫, স্বাগতম ২০২৬
নির্বাচন, রাজনীতি ও জাতীয় প্রত্যাশার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ
নানা ঘটনাপ্রবাহ, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আরেকটি বছর পেরিয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিলো ২০২৫। বিদায়ী বছরের অভিজ্ঞতা পেছনে রেখে নতুন আশায় সামনে এগিয়ে আসছে ২০২৬, নতুন বছরকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজজীবনে রয়েছে বড় ধরনের প্রত্যাশা। বিশেষ করে ২০২৬ এর ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিকে সবার চোখ। রাজনীতির নানা সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত বোদ্ধা মহল।
২০২৫ সালজুড়ে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ছিল অন্যতম আলোচিত ও সংবেদনশীল ইস্যু। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, আন্দোলন-সমাবেশ এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ও সুপারিশ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক ভোট এবং গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও বিভিন্ন দলের দাবি, সব মিলিয়ে বছরজুড়েই রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত ও সচেতন নাগরিক আলোচনায় মুখর।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও ছিল নানা আলোচনা। একই সঙ্গে রাজনীতিতে সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। নতুন বছর ২০২৬-এ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পরিবেশ ফিরবে—এমন প্রত্যাশাই এখন সাধারণ মানুষের।
অন্যদিকে, অর্থনৈতিক দিক থেকেও ২০২৫ ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তবে একই সঙ্গে প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিতও দেখা গেছে। সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত লাখো প্রবাসী বাংলাদেশি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার ওঠানামার মধ্যেও প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়েছে। রেমিট্যান্স শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা, দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। সরকারিভাবে প্রণোদনা ও বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহ দেওয়ার ফলে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবশেষ তথ্য মতে, চলতি ডিসেম্বরে ২৯ দিনে দেশে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা ডলার সংকট কমাতে সাহায্য করেছে। ৩১ ডিসেম্বর দিন শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ হয়েছে ২৮ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল রিজার্ভ। পরবর্তীতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি এবং চলতি হিসাব ঘাটতির কারণে রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করলে ধীরে ধীরে রিজার্ভ কমতে থাকে।
সামাজিক ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। তরুণ সমাজের বড় অংশ কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ, স্টার্টআপ সংস্কৃতি এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা আগামী দিনের বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
২০২৬ সাল তাই শুধু আরেকটি ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের নাম নয়, এটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক চর্চা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। বিদায় ২০২৫, তোমার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাগত জানাই নতুন বছর ২০২৬-কে, যেখানে আশা, দায়িত্ব ও সম্ভাবনার এক নতুন অধ্যায় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
এসএম