চা শিল্পে করা দৈনিক ১১৭ টাকা নিম্নতম মজুরির সুপারিশ বাতিল করে বর্তমান বাজারদর বিবেচনায় ৬৭০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। সংগঠনটি বলছে, চা শিল্পের ১৬৭ বছরের ইতিহাসে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৬৭ টাকাও হয়নি।

রোববার (২৭ জুন) রাজধানীর তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ড কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে এই দাবি জানায়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনাকালে বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকরা ছুটি ও নানা রকম প্রণোদনা পেলেও চা-শ্রমিক তা পায়নি। উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২০ সালেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন বেশি হয়। শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবম স্থানে উঠে এসেছে। অথচ সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড ১১ বছরের বেশি সময় পর গত ১৩ জুন চা-বাগান শিল্প সেক্টরে শ্রমিকদের জন্য ‘এ’ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১২০ টাকা, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্লাস বাগানে যথাক্রমে ১১৮ টাকা ও ১১৭ টাকা মজুরির প্রস্তাব করে বিভিন্ন সুপারিশ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। 

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ঘোষিত ৪৩টি সেক্টরে ও মজুরি কমিশন ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সেক্টরের মজুরির সঙ্গে তুলনা করলে চা-শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। মজুরি বোর্ড তাদের সুপারিশে চা-শিল্পের প্রচলিত প্রথা দ্বি-বার্ষিক চুক্তিকে আগামীতে ত্রি-বার্ষিক করার সুপারিশ করেছে।

বিস্ময়কর বিষয় যে, ঠিকা (শিক্ষানবিস/অস্থায়ী) শ্রমিকরা যেখানে বর্তমানে ১২০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন সেখানে মজুরি বোর্ড প্রস্তাব করেছে ১১০ টাকা। বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এর ৫৮ ধারায় বিশুদ্ধ পানির কথা বলা হলেও মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের বিশুদ্ধ পানির জন্য কুয়ার ব্যবস্থা, শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে গ্র্যাচুইটি ও কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার মতো সুপারিশও করেছে।

তারা আরও বলেন, একজন শ্রমিকের দৈনিক পরিশ্রমের পর পরবর্তী দিন কাজে যোগদানের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজনে দৈনিক তিন বেলা অতি সাধারণভাবে খাবারের জন্য ১০০ (২০+৪০+৪০) টাকা দিলেও পেট ভরে না। তাই, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ মা-বাবাকে নিয়ে ছয় সদস্যের একটি পরিবারের জন্য দৈনিক ন্যূনতম ৬০০ টাকা দরকার। 

এর সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচযুক্ত করলে মাসিক ২০ হাজার টাকা ছাড়া কোনোভাবেই বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে চলা সম্ভব নয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর চা-শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি খুবই কম। প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ চীন ও কেনিয়ার চেয়ে আমাদের দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। অথচ আমাদের দেশের সরকার কথায় কথায় উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলে থাকেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে প্রতিবেশীদের থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।

বক্তারা আরও বলেন, সরকারি তথ্য মতে দেশে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে ও মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। সেখানে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আয় মাসিক ৩ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক মাত্র ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। তাই সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরির দাবি জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্য ও শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়নের দাবি জানাই। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সব অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সব শ্রমিককে স্থায়ী করার বিষয় যুক্ত করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটো। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অটো রিকশা সিএনজি চালক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ হানিফ এবং বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান খান।

এমএইচএন/ওএফ