করোনা প্রতিরোধে লকডাউন দেওয়া হলেও সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস খোলা রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর চাকরিজীবী মানুষ। বাধ্য হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে অধিকাংশ মানুষই ব্যবহার করছেন রিকশা। রাজধানীতে এখন চলাচলের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে বাহনটি। ভাড়া দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ, সেটি সমস্যা নয় বরং গন্তব্যে পৌঁছানোই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাজধানীর শুক্রাবাদ, কলাবাগান, পান্থপথ, সায়েন্সল্যাব এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সড়কে দৈনন্দিন কাজের জন্য মানুষের চলাচল অন্য সব দিনের মতোই দেখা গেছে। কেবল নেই গণপরিবহন তথা বাস।

সড়কজুড়ে দেখা গেছে ব্যক্তিগত গাড়ি- প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের আধিপত্য। যাদের চলাচলের নিজস্ব ব্যবস্থা নেই, তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে ভাড়া করছেন রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। তবে সিএনজির ভাড়া তুলনামূলক বেশি হওয়ায় রিকশাতেই ঝুঁকেছেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন রিকশাচালকরা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে আগে যে পরিমাণ টাকা লাগত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে।

রিকশায় গন্তব্যে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় কর্মী আনা-নেওয়া করার নির্দেশনা অনেক প্রতিষ্ঠান মানছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।

অফিস শেষে বাসায় ফেরার জন্য পান্থপথ মোড়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হাসিবুল ইসলাম সোহেল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মচারীকে নিজ দায়িত্বে অফিসে আসতে হবে এবং যেতে হবে। অফিসের পক্ষে গাড়ি ভাড়া করে জনবল আনা নেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমরা পড়েছি বিপাকে। রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া লাগলেও কিছুই করার নেই, বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।

সবকিছু খোলা রেখে কী করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা যায়? এমন প্রশ্ন করেন আরেক চাকরিজীবী শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া লাগলেও চাকরি বাঁচাতে সময়মতো অফিসে পৌঁছানো লাগবে। আর অফিস খোলা রাখা হয়েছে, অথচ গণপরিবহন নেই। আমরা যারা চাকরি করি, তারা কয় টাকা বেতন পাই? এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত সম্ভব? যারা এই সিদ্ধান্তগুলো নেন তাদের বিষয়গুলো ভাবা উচিত।

রিকশাচালকরা বলছেন, অতিরিক্ত ভাড়া নয়, বরং সামনে কঠোর লকডাউনে যখন সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হবে তখন জীবনযাপনের জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকা আয়ের চেষ্টা করছেন তারা।

কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশাচালক আলাউদ্দিন হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল (সোমবার) সারাদিনে ৬০০ টাকা আয় হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ টাকা জমা দিতে হয়েছে গ্যারেজে আর খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও পরিবার-পরিজন রয়েছে, তাদের টাকা পাঠাতে হয়। সামনে আবার কঠোর লকডাউন আসছে। তখন সবকিছু বন্ধ থাকবে। তাহলে আমরা কীভাবে চলব?

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সরকার ঘোষিত সীমিত পরিসরের লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রিকশা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল দিয়ে। সেক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মী আনা-নেওয়া করতে হবে।

আরএইচটি/এসএসএইচ/জেএস