দেশে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া দেশব্যাপী এ লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এবারের লকডাউনকে সফল করতে পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।

সাত দিনব্যাপী এ লকডাউনের শুরুটা এখন পর্যন্ত ভালো হয়েছে, সরেজমিনে চিত্র দেখে তেমনটাই বোঝা যাচ্ছে। লকডাউন শুরুর সকালে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা ফাঁকা। রাস্তায় মানুষ এবং যানবাহনের সংখ্যা খুব কম দেখা যাচ্ছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এবং যাদের বের হওয়ার অনুমতি আছে সেসব লোকজন ব্যতীত তেমন লোকজনের উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর প্রগতি সরণি, শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপে বুধবার (৩০ জুন) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা।

তবে জরুরি প্রয়োজনে এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে যেসব অফিস খোলা আছে, সেসব অফিসের কর্মীদের সড়কে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রাইড শেয়ারিং বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট কার, রিকশা, অফিসের মাইক্রোবাসগুলো চলাচল করছে।

গণপরিবহন না চললেও অফিসযাত্রীদের জন্য ছিল তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জামাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, যেহেতু জরুরি প্রয়োজনে অফিস খোলা রাখা হয়েছে তাই যেতে হচ্ছে। সবাইকে ট্রান্সপোর্ট সেবা দিতে পারবে না, তাই রিকশায় অফিস যাবো।

অন্যান্য দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সড়কে অফিসগামী মানুষের ভিড় থাকে। সেই তুলনায় আজ অনেক কম মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে সবাই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন, পরিস্থিতি ঢিলেঢালা থাকলে হয়েতো মানুষ বের হবে- এমনটাই বলছিলেন রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা চালক লোকমান। 

বাড্ডা লিংক রোডে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন হেমায়েতুল্লাহ নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, প্রথম দিন বলে মানুষের উপস্থিতি কম সড়কে। তবে যাদের অফিসে এখনও খোলা রাখা হয়েছে সেই সব অফিসের কর্মীদের সড়কে দেখা যাচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ রাস্তায় মানুষ কম।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় থেকে একটি রিকশায় গুলিস্থানের দিকে যাচ্ছিলেন শাহাবউদ্দিন নামের একজন। বিশেষ প্রয়োজনে তারও অফিস খোলা আছে। যে কারণে ১২০ টাকা ভাড়ায় মালিবাগ থেকে গুলিস্থানের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনিও জানালেন, আজ বাইরে মানুষ কম, যারা বের হয়েছেন তারা বাধ্য হয়েই বের হয়েছেন।

শাহাবউদ্দিন যেই রিকশায় যাচ্ছিলেন সেই রিকশার চালক সোবহান মিয়া বলেন, শুধু অফিসে যাওয়া মানুষ ছাড়া সড়কে তেমন কোন মানুষ নেই। সকাল থেকে ৩টি ট্রিপ দিয়েছি, তারা সবাই অফিসে যাওয়ার জন্যই বের হয়েছেন। এছাড়া রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা, রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে রিকশা করে রামপুরা এলাকায় যাচ্ছেন নার্স আরোশী খান। তিনি রামপুরা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আজ সকাল থেকেই রাস্তা একদম ফাঁকা। গত তিন দিনের লকডাউনের পরিস্থিতি থেকে আজকের সকালের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। দেখে মনে হচ্ছে আসলেই লকডাউন চলছে।

শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান রিকশা চালক আনোয়ার হোসেন জানান, আজ সকাল থেকে রাস্তায় মানুষের উপস্থিত কম বলে তারা যাত্রী কম পাচ্ছেন। এক্কেবারে জরুরি প্রয়োজন ও যাদের অফিস খোলা তারা ছাড়া রাস্তায় আর কোনো মানুষ সকাল থেকে তেমন ভাবে দেখননি।

এদিকে লকডাউনকে সফল করতে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিচ্ছে র‍্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনকে সফল করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো কঠোরভাবে নজরদারি করছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ।

এদিকে প্রজ্ঞাপন অনুসারে, কঠোর লকডাউন চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।

বিধিনিষেধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র বহন করে যাতায়াত করতে পারবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।শিল্প কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

এএসএস/এমএসি/এসএম