আজ থেকে আবারও সারাদেশে প্রথম ডোজের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে

রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা আবুল আয়েছ খান। পাঁচ মাস আগে টিকার জন্য তিনি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর বুধবার (৩০ জুন) রাতে টিকার এসএমএস পান। পরে আজ (১ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে টিকা নিয়েছেন তিনি।

টিকা কেন্দ্রে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় আয়েছের। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। টিকা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম। আজ টিকা নিলাম। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। টিকার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’

৬০ বছর বয়সী ফাহমিদা নাসিম রেজিস্ট্রেশনের চার মাস পর টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পরে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ফাহমিদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিকার জন্য মোহাম্মদপুর থেকে এসেছি। টিকা নেওয়ার পরে বিশ্রাম করতে বললেন। এখনও স্বাভাবিক আছি।’

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) আয়েছ ও নাসিমার মত আরও অনেকেই পাঁচ থেকে চার মাস আগে রেজিস্ট্রেশনের পর এ কেন্দ্র থেকে আজ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর টিকা পেয়েও তারা খুশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. খোরশেদ আলম জানান, সকাল ৯টা থেকে কেন্দ্রটিতে ফাইজারের প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকের জন্য ২০০ জনের টিকার তালিকা রয়েছে। টিকার কার্যক্রম খুব ভালোভাবে চলছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আজ থেকে আবারও সারাদেশে প্রথম ডোজের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম ডোজ প্রদানের এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দিয়ে। রাজধানীর সাতটি কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ। আপাতত অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা এ টিকা পাচ্ছেন।

লকডাউনেও ভাটা পড়েনি টিকা কেন্দ্রে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আজ (১ জুলাই) সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। চলমান এ লকডাউনেও ভাটা পড়েনি টিকা কেন্দ্র। সরেজমিনে বিএসএমএমই’র টিকা কেন্দ্রে টিকা গ্রহীতাদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই দূর থেকে টিকা নিতে এসেছেন।

টিকা নিতে আসা সামলা আক্তার জানান, মোহাম্মদপুর থেকে ১২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে টিকা নিতে এসেছি। লকডাউনের কারণে টিকা নিতে আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে রিকশা পেতে কষ্ট হয়েছে। চালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছে।

এ কেন্দ্রের সিনিয়র নার্স সাদিয়া সুমি বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের কারও কাছ থেকে শুনিনি যে লকডাউনের কারণে সমস্যায় পড়েছেন। গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ অনেক বেশি মানুষ টিকা নিতে এসেছেন।

টিকার জন্য এসে ফিরে গেছেন অনেক প্রবাসী

রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই বিএসএমএমইউতে টিকা নিতে এসে ফিরে গেছেন অনেক প্রবাসী। এদের মধ্যে সৌদি প্রবাসী আক্কাস আলী বলেন, শুনেছি এখানে প্রবাসীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে, তাই এসেছি। কীভাবে কী করতে হবে আমরাতো কিছু বুঝতেছি না। বিদেশ যেতে হলে আমাদের টিকা দরকার।

কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ হারুন জানান, টিকা নিতে এসেছি। ওনারা বলছেন, এখানে নাকি আমাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। টিকা না নিলে তো বিপদে পড়ে যাব ভাই।

এ কেন্দ্রের সিনিয়র নার্স মতিউর রহমান জানান, ১০ থেকে ১২ জনের মতো প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা নিতে এসেছেন। তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, কোনো বিদেশগামী যদি রেজিস্ট্রেশন করে থাকে তাদের শিডিউল না থাকলেও যেন টিকা দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন করা প্রবাসীদের শিডিউল না থাকলেও আমরা টিকা দিয়ে দেবো।

এনআই/এমএইচএস