‘বৃষ্টি ধরে বসে থাকলে পেট চলবে না’
‘বৃষ্টিতে ভিজি, সেই পানি শুকায়; আবার ভিজি, আবার শুকায়। এভাবেই চলছে গত কয়েকদিন। বৃষ্টির অজুহাতে তো আর বসে থাকতে পারি না। বৃষ্টি ধরে বসে থাকলে পেট চলবে না। পরিবার আমার ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ চালাতেই হবে।’
ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা শরীরে যবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ রিকশাচালক আব্দুল মান্নান। কিছুদিন আগেই জীবিকার তাগিদে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি। পেশায় দিনমজুর হলেও করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই উপার্জনের চিন্তায় তিনি ঢাকা পাড়ি জমিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আব্দুল মান্নান বলেন, ঢাকায় এসেও দিনমজুরি বা অন্য কাজে তেমন সুবিধা করতে পারিনি। পরে মোহাম্মদপুরের একটি গ্যারেজ থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা জমায় রিকশা নিয়েছি। দুর্বল শরীর, বিশ্রাম দরকার হলেও তা উপেক্ষা করে সকাল থেকে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত রিকশা চালাই। ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ হোটেলে খাই, যত কম টাকায় সম্ভব।
ক্ষুধা আর পরিশ্রম উপেক্ষা করতে পারলেও বৃষ্টির পানি আর সহ্য করতে পারছেন না আব্দুল মান্নান। প্রাথমিক অবস্থায় বেশ ভালো আয় হলেও সর্বাত্মক লকডাউনে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় আয়ে ভাটা পড়েছে বলে জানান তিনি।
টানা বৃষ্টি আর সর্বাত্মক লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন আব্দুল মান্নানের মতো এমন অনেক রিকশাচালক। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রথম কয়েকদিনে রিকশা নির্ভরতার কারণে আয় ভালো হলেও এখন সড়কে মানুষজন না থাকায় ভালো নেই তারা।
শুক্রবার (২ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সড়কে মানুষের চলাফেরা ছিল একেবারেই কম। যার ফলে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী পাননি রিকশাচালকরা। এরমধ্যে নামে ঝুম বৃষ্টিও। আয়ে টান পড়ায় ভারীবৃষ্টিতেও কাকভেজা হয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায় রিকশাচালকদের। এতে মান্নানের মতেহা অনেকের শরীরে কাঁপন শুরু হয়।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, আমাদের জন্য বৃষ্টিই কী আর রোদই কী। সব সময় আয়ের চিন্তায় থাকতে হয়। প্রতিদিন জমা-খরচ, খাওয়া খরচ, থাকার খরচ সবকিছু জোগাড় করার পর পরিবারের খরচের ব্যবস্থা করতে হয়। তাই যেকোনো অবস্থাতেই যাত্রী নিয়ে ছুটতে হয়। একদিন আলসেমি করে কম সময় রিকশা চালালেই পুরো মাস এর শাস্তি ভোগ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে রোদে পুড়তে বা বৃষ্টিতে ভিজতে একটু খারাপ লাগত। কিন্তু এখন আর লাগে না। সবকিছু সহ্য হয়ে গেছে।
শুধু রিকশাচালকরাই নয়, কষ্টে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া সব পেশার মানুষ।
শুক্রাবাদ বাজারের প্রবেশমুখে বৃষ্টিতে ভিজে দুটি খাঁচায় লেবু নিয়ে বসেছেন বাচ্চু মিয়া। তিনি বললেন, রাস্তায় লেবুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি করে জীবন চালাই। লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে আজ লেবু ছাড়া অন্য কিছু আনতে পারিনি। ফুটপাতে অথবা মানুষের দোকানের সামনে একটু জায়গা পেলেই বসি। তা থেকে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু আজ মানুষজন কম তাই বেচা-বিক্রিও কম।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। যা আগামী বুধবার (৭ জুলাই) মধ্যরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আরএইচটি/এমএইচএস/জেএস