অনুমোদিত আগর প্রকল্পে সাত জনের বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য লাগবে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। এখানে জনপ্রতি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় হবে ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৫৭১ টাকা। এর বাইরেও প্রকল্পে সেমিনার, কনফারেন্স, কর্মশালা এবং আট জনের জন্য বৈদেশিক শিক্ষা সফর বাবদ ৫৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এখানে জনপ্রতি খরচ হবে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৫ টাকা। 

অবাক করা বিষয় হলেও এমনই আবদার করা হয়ে সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন হওয়া আগর প্রকল্পের। অনুমোদিত প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের সারসংক্ষেপ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

রোববার (৪ জুলাই) পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত ২২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পেই এমন আবদার করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বন রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগর-এর আদি জন্মকাল আমাদের সিলেট ও ত্রিপুরাতে। এদেশে জন্মকাল হলেও বর্তমানে আগর নিয়ে সেরকম কোনো গবেষণা বা উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি নেই। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে আগর নিয়ে গবেষণাসহ আগর থেকে তেল উৎপাদন করে দেশের বাইরে রফতানি করব।

সাতজনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা লাগবে। বিদেশের প্রশিক্ষণে এতো টাকা কীভাবে খরচ করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৫ দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নেব। ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণের জন্য মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের কয়েকটি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে চুক্তি করেছি। তারা প্রশিক্ষক ও যেসব ক্লাসরুমে প্রশিক্ষণ হবে তার জন্য কিছু টাকা নেবে। যেমন প্রশিক্ষক প্রতিটি ক্লাসের জন্য ১০০ ডলার নেবেন। বাকি অর্থ আমাদের থাকা-খাওয়া ও বিমান ভাড়ায় খরচ করা হবে। আমরা সবকিছু হিসেব করেই ব্যয় নির্ধারণ করেছি। যেখানে যত টাকা লাগবে তত টাকাই ব্যয় ধরা হয়েছে।  

বিদেশে শিক্ষা সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ‘সেমিনার/কনফারেন্স/কর্মশালা এবং আট জনের জন্য বৈদেশিক স্টাডি ট্যুর’ বাবদ ৫৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এটার বিস্তারিত দেখলে বুঝতে পারবেন। কর্মশালা এবং স্টাডি ট্যুরের জন্য এই টাকা চাওয়া হয়েছে। স্টাডি ট্যুরের জন্য ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। বাকি টাকা সভা সেমিনার অথবা কর্মশালার জন্য ব্যয় করা হবে। স্টাডি ট্যুরের জন্য ভারত ও থাইল্যান্ডে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- একটি বিশেষায়িত গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে কৃত্রিম পদ্ধতিতে স্বল্প-সময়ে সম্পূর্ণ-বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়নকারী কীট ও এর সফল প্রয়োগ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা, বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশি আগর-কাঠ, তেল ও আগরজাত পণ্যের সহজ প্রবেশার্থে মান পরীক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণের ব্যবস্থা করা এবং উদ্ভাবিত কৃত্রিম পদ্ধতিতে আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি আগর-সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাঝে হস্তান্তর করা।

দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ এই তিনটি বিভাগের চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি- এই ছয় জেলার ৯টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- গবেষণার মাধ্যমে কৃত্রিম পদ্ধতিতে আগর রেজিন সঞ্চয়নকারী কীট ও কীট-প্রয়োগ পদ্ধতি উদ্ভাবন, আগর গবেষণার জন্য নতুন গবেষণাগার স্থাপন, গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, আগর সঞ্চয়নে ন্যানোটেকনোলজি প্রয়োগ, অধিক উৎপাদনশীল এলাকায় পাঁচটি আগর সঞ্চয়ন পরীক্ষণক্ষেত্র স্থাপন, তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তিনটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, দক্ষ গবেষক ও সহায়ক জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগকৃত ও বর্তমান গবেষকদের মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাগার ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের মাঝে গুরুত্বারোপ, সনিক এবং আলট্রাসনিক শব্দ-তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে আগর সঞ্চয়ন পরিমাপণ, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি স্টেকহোল্ডারদের মাঝে হস্তান্তর, বৈদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর, আগর গবেষণা বিষয়ক ফেলোশিপ প্রদান, প্রভাবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কম মূল্যমানের সাদা-আগর-তেলকে অধিক মূল্যমানের কালো-আগর-তেলে রূপান্তর।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস  বলেন, প্রকল্পটির আওতায় একটি বিশেষায়িত গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। গবেষণাগার থাকলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে স্বল্প-সময়ে সম্পূর্ণ-বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়নকারী কীট ও এর সফল প্রয়োগ পদ্ধতি উদ্ভাবন করার কার্যক্রম গ্রহণ যাবে। এছাড়া বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশি আগর-কাঠ, তেল ও আগর-জাত পণ্যের সহজ প্রবেশার্থে মান পরীক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণের ব্যবস্থা করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উদ্ভাবিত কৃত্রিম পদ্ধতিতে আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি আগর-সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাঝে হস্তান্তর করাও সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বন সাব-সেক্টরের উন্নয়নের জন্য যেসব নিয়ামকের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বনায়নের মাধ্যমে বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ অন্যতম। এ প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত আগর বাগান সৃজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমানো সম্ভব হবে। যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এসআর/এইচকে