‘কোরবানির বর্জ্য সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব’
মক্কা-মদিনার আদলে কোরবানি ব্যবস্থাপনায় বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।
সোমবার (৫ জুলাই) ‘মক্কা-মদিনার আদলে কোরবানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। পবা ও সাদাকাহ ফাউন্ডেশন ইউএসএ-এর আয়োজনে সভাটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
আবু নাসের খান বলেন, অনেকগুলো কারণে মক্কা মদিনার আদলতে কোরবানি ব্যবস্থাপনা করা দরকার। এর সঙ্গে ধর্মীয়, সামাজিক, স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক বিষয়ও যুক্ত রয়েছে।
তিনি জানান, স্লটার হাউজে মক্কা মদিনার আদলে যদি কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে পশু চিকিৎসকরা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারবেন। এছাড়া এখানে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মাংস প্রস্তুত করা হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাটাইয়ে যেভাবে মাংস প্রস্তুত করা হয়, সেটা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর গোবর আলাদাভাবে রাখা হলে, পরে সেটা সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। রক্তের ব্যবহারও করা যাবে। এছাড়া ফেলে দেওয়ার মতো অন্যান্য অঙ্গও কিন্তু কাজে লাগানো যাবে। চামড়াও অনেক বেশি ভালো থাকে। আলাদাভাবে ডাম্পিংয়ের জায়গা দরকার হচ্ছে না। এখানে কিন্তু আর্থিক বিষয়ও যুক্ত হয়ে গেল।
সভায় আবু নাসের খান কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেলে করোনা সংক্রমণ যেনো না হয় সেসব বিষয়ে কঠোর নিয়ম মেনে কোরবানির ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ডাম্পিং সিস্টেমের দিকে নজর দিতে হবে। মাংস প্রস্তুত স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা জরুরি। মাংস বিতরণ ধর্ম সম্মত এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা যাবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের দিয়ে কোরবানি করা নিষিদ্ধ করতে হবে। রাস্তাঘাটে কোরবানি করা বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচিত কোরবানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করা। গরুর হাটের বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করলে তা থেকে জৈব সার উৎপন্ন করা যাবে।
তিনি জানান, সিটি করপোরেশনকে নিয়মনীতি মেনে সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা বেচা করার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থাপনা জারি করা ও পশু পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শহরের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সবার পক্ষ থেকে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোরবানি করার পদ্ধতি, আদর্শ তুলে ধরে সেটা প্রচারের ব্যবস্থা করলে সবাই এ বিষয়ে অবগত হবেন। এছাড়া কোরবানির পশু জবাই করে সেগুলো আনার সঠিক সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
সভায় বক্তারা জানান, গত কয়েক বছরে দেশে কোরবানি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমে বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ঢাকা মহানগরীসহ সব জায়গায় কোরবানির পশুর বাজারজাত ব্যবস্থাপনা, জবাই, মাংস প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলোচনা সভায় পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, সহ-সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, পরিবেশ বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
একে/এমএইচএস