সৌদি আরব প্রবাসী শাহেল আলী সিলেটের বাসিন্দা। করোনাভাইরাসের টিকা না দেওয়ায় কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। কেননা টিকা ছাড়া দেশটিতে গেলে সাতদিনের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এতে তার খরচ পড়বে ৭০ হাজার টাকা।

বিমান টিকিটসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এতো টাকা বহন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য টিকা নিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহেল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে দেশে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিলেট থেকে ট্রাকে চড়ে ঢাকায় এসে টিকা নেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে টিকা নেওয়ার পর কথা হয় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে।

শাহেল বলেন, টিকা না দিয়ে গেলে তো অনেক খরচ। সেজন্য রেজিস্ট্রেশন করি সোমবার (৫ জুলাই)। গতকাল রাত ৮টার পর টিকা নেওয়ার জন্য এসএমএস পাই। কিন্তু ঢাকায় এতো কম সময়ে আসাটাই বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়।  উপায় না পেয়ে ট্রাকে করে ১ হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় এসে টিকা নিলাম। এখন বাড়িতে কীভাবে যাব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

বিএসএমএমইউয়ে টিকা নিচ্ছেন একজন প্রবাসী

সৌদি প্রবাসী তানজিম উদ্দিন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন টিকা নিতে। তিনি বলেন, গতকাল রাতে এসএমএস পেয়েছি টিকা নেওয়ার। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় লকডাউনের মধ্যে কয়েক দফায় যানবাহন পরিবর্তন করে ঢাকায় এসে টিকা নিলাম।

টিকা কেন্দ্রগুলোয় শাহেল-তানজিমের মতো বেশিরভাগ সৌদি ও কুয়েতগামী প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিকার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ঢাকায় এসে টিকা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রবাসীদের। তবে টিকা পেয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় খুশি তারা।

বুধবার (৭ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে সৌদি-কুয়েতগামী প্রবাসীদের ঢাকার সাতটি কেন্দ্রে ফাইবারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। সাতটি কেন্দ্রে ২০০ করে মোট ১৪০০ প্রবাসীকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্যের চেয়েও বেশি পরিমাণ টিকা দেওয়া প্রস্তুতি রাখা হয়।

বিএসএমএমইউয়ের কনভেনশন সেন্টারে সৌদি প্রবাসী মো. সাইফুলকে প্রথম টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাইফুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকা পেয়ে আমি খুশি। তবে আসা-যাওয়ার ভোগান্তি না থাকলে আরও ভালো হতো। 

সৌদি-কুয়েতগামীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে বলেই দেশের জেলা শহরগুলোয় এ টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ফাইজারের টিকা ঢাকার বাইরে সংরক্ষণের মতো ব্যবস্থা নেই। তাই দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যে এসব প্রবাসীদের কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হচ্ছে।


টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন প্রবাসীরা

বিএসএমএমইউয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. খোরশেদ আলম প্রথম দিনের টিকা কার্যক্রম শেষে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ কেন্দ্রে প্রতিদিন তিনশর মতো সৌদি ও কুয়েতগামীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। তবে কতজনকে টিকা দেওয়া হয়েছে তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকার সাতটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ জন বিদেশগামীকে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে গত পাঁচ দিনে ২০ হাজারের বেশি বিদেশগামী নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন শেষ করার প্রক্রিয়ায় আছেন আরও ২০ হাজারের ওপরে। এদের মধ্যে যেসব বিদেশগামী সোমবার (৫ জুলাই) চালু হওয়া সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে তাদের ক্রমান্বয়ে টিকা গ্রহণের তারিখের অন্তত এক দিন আগে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

এনআই/এসকেডি