নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডসের ফ্যাক্টরিতে আগুনের ঘটনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করছে। আগুনের ঘটনায় তিন শ্রমিকের মৃত্যু ও প্রায় অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন। 

অগ্নিকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তা করছেন। টাকা-পয়সার দিকে না তাকিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আহত ৩২ জন শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ১২ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, আহত ২০ শ্রমিক এখন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

আপতকালীন মুহূর্তে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এগিয়ে আসায় আহত শ্রমিকদের স্বজনরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম (২৭)। আগুন লাগার সময় তিনি জীবন বাঁচাতে তিন তলা থেকে লাফ দিয়েছেন। এ সময় হাতে-পায়ে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছেন। তিনি এখন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 আশরাফুলের বোন শাহিদা আক্তার ঢাকা পোস্টকে জানান, তার ভাই আহত হয়েছেন শুনে তিনি গাজীপুর থেকে এসেছেন। এসে দেখেন তার ভাই ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই তার ভাইকে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, আমি চিন্তা করেছিলাম আমার আহত ভাইকে কোথায় কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখি তারা আমার ভাইকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা চায়নি।

বিরেন্দ্র বিশ্বাসের ভায়রার মেয়ে কারখানার শ্রমিক শ্যামলী ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, কারখানায় আহত শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। তারা যদি শ্রমিকদের চিকিৎসা না দিত তাহলে ঢাকা নিয়ে যেতে যেতে অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে যেত।

চিকিৎসা সেবার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন দুটি মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ২০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। এক্ষেত্রে আমরা গুরুত্ব সহকারে আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। গুরুতর রোগীদের আমরা ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়েছি।  

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর ও সাধারণ আহত শ্রমিকরা চিকিৎসার আশায় প্রথমে ছুটে গিয়েছেন স্থানীয় ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি বলেন, শুনেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে কোনো কার্পণ্য করেনি। তারা যদি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা না দিতেন তাহলে গুরুতর আহত শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানাই।

এমএসি/ওএফ