ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমিনাবাদ কবি মুয়াজ্জেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. হাসনাইন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে হাসনাইন সবার ছোট। বাবা পেশায় রিকশাচালক।

লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ স্কুল। তাই এ ফাঁকে কারখানায় কাজ করে পরিবারে সহযোগিতা করার ইচ্ছা ছিল তার। সে ইচ্ছে থেকে চলে আসেন রাজধানীতে। যোগ দেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায়।

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজ বাকি শ্রমিকদের মতো এখনো খোঁজ মেলেনি শিশু হাসনাইনেরও। তাই ভাইয়ের খোঁজে আইডি কার্ড হাতে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসেছেন বড় বোন তানিয়া। 

ঢাকা পোস্টকে তানিয়া বলেন, স্কুল বন্ধ তাই কাজে গেছে। ফ্যাক্টরিতে কাজের সময় কালকে (বৃহস্পতিবার) জানলাম, কারখানায় আগুন লেগেছে। সারা রাত কারখানার পাশে ছিলাম। পরে শুনলাম ৪৯ জন মারা গেছেন। সব লাশ ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছে। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ, তারপরও অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। এখন আমি আমার ভাইকে চাই। জীবিত চাই, মারা গেলে লাশ চাই।

তিনি বলেন, আমার মা বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়ে‌ছে। ভাইয়ের চিন্তায় বাবাও অসুস্থ।

কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে তিনি ব‌লেন, আমার ছোট ভাই যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার লাশ দিন। আর মারা না গিয়ে থাকলে তাকে জীবিত ফিরিয়ে দিন, এটাই আমার চাওয়া।

উল্লেখ্য, হাশেম ফুডস লিমিটেডের ৭ তলা ভবনের নিচ তলার একটি ফ্লোরে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় গোটা কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই স্বপ্না রানী ও মিনা আক্তার নামে দুই নারী শ্রমিক নিহত হন। রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোরসালিন (২৮) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

শুক্রবার দুপুরে ওই কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

এসআই/এসকেডি/জেএস