প্রতিদিনই টিসিবির পণ্য কিনতে বিভিন্ন পয়েন্টে ভিড় করেন ক্রেতারা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

সোমবার দুপুর ১২টা। রাজধানীর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনের রাস্তায় নীল রঙের একটি ট্রাক ঘিরে মানুষের বিশাল লাইন। মানুষের এ দীর্ঘ লাইন গিয়ে ঠেকেছে হাতিরঝিলের রাস্তায়। লাইন ঠিকই আছে, তবে দুজন গ্রাহকের মাঝখানে ফাঁকা নেই এক ইঞ্চি জায়গাও। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা প্রত্যেককে অন্তত ১ মিটার দূরত্বে অবস্থান করতে বলেছেন।

সিরিয়ালে দাঁড়ানো বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। কিছু সময় পরপর ওই সিরিয়াল থেকে একটি ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মসুর ডালের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে আসছেন একেকজন। দিচ্ছেন বিজয়ের হাসি। যেন যুদ্ধ জয় করে এসেছেন! আর হবেই বা না কেন? কারণ এ ৯ কেজি পণ্য পেতে একেকজন গ্রাহককে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা!

বর্তমান বাজারে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে ক্রেতাদের। সাধারণ ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তিনটি নিত্যপণ্যে (সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি) ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে। সারাদেশে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গত ৫ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও মসুর ডাল এবং ১০০ টাকা লিটার হিসেবে সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।

রামপুরার একটি মার্কেটের দোকানি অভি ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পেয়েছেন টিসিবির পণ্য। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পণ্য পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। দোকান বন্ধ থাকায় মালিক গত মাসের বেতন এখনও দেয়নি। তাই কম দামে পেয়ে এখান থেকে নিচ্ছি। সকালের দিকে আরও ভিড় ছিল। আমি প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে এসব পণ্য পেয়েছি।

ওই টিসিবির ট্রাকের পরিচালক সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে ৭০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি ডাল এবং এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল নিয়ে আমরা বের হয়েছি। এখানে পৌঁছেছি সকাল ১১টার দিকে। এখন প্রায় সবই শেষের দিকে। এখানে মানুষ লাইন ধরেছে ঠিকই। কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, দূরত্ব মানছে না। বারবার বললেও আমাদের কথা মূল্যায়ন করছেন না কেউ।

মালিবাগ রেল গেটের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে সীমা নামে এক গৃহকর্মী ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ২ কেজি চিনি কিনতে পেরেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও তেল নিতে পারলাম না। খুবই খারাপ লাগছে। তেলের জন্যই এতো কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বাজারে তেলের দাম অনেক। এখান থেকে পেলে সুবিধা হয়। এখন ১টা বাজে, ১১টায় এসে এখানে দাঁড়িয়েছি। কোনো খাওয়া দাওয়া নেই। এটা কি মানুষের জীবন? আবার তেলের জন্য কাল সকালে এসে দাঁড়াতে হবে।

রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ মোড়, দয়াগঞ্জ মোড়, পল্টন, নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য পেয়ে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে পণ্য পাওয়ায় সব কষ্ট ভুলে গেছেন তারা। যারা লাইন দাঁড়িয়ে আছেন তাদের হতে ছাতা ও বাজারের ব্যাগ দেখা গেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব মানতে অনেকটা অনীহা তাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রেতা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি আমি একা মানলে তো হবে না। সবাইকেই মানতে হবে। কেউ মানে না, আমি একা মেনে কী করব?

আবার অনেক ক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না আবার অনেকের মাস্ক থাকলেও তা থুতনিতে ছিল।

অধিকাংশ ক্রেতার মুখে নেই মাস্ক

পণ্য বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, পণ্যমূল্য যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে টিসিবি সেই লক্ষ্যে কাজ করে। জনগণ যেন সরকারি সেবা ভর্তুকি মূল্যে পায় সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। বাজারের তুলনায় আমাদের পণ্যের মান অনেক ভালো। তাই চাহিদাও বেশি।

ট্রাকের সামনের জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ডিলারদের প্রতিদিনই বলি, আপনারা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উদ্বুদ্ধ করবেন। কোনো ক্রেতা মাস্ক ছাড়া আসলে তাকে পণ্য দেবেন না। প্রত্যেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়াতে বলবেন। আমরা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনুরোধ করতে পারি বল প্রয়োগ করতে পারি না।

এমএইচএন/এসকেডি