নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।  

সোমবার (১২ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে পবা বলেছে, সেজান জুস কারখানার সিঁড়ি বন্ধ থাকায় নারী ও শিশু শ্রমিকসহ অনেকের লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। সেজান জুস কারখানায় মূলত শিশু শ্রমিকদের অল্প বেতন দিয়ে খাটানো হতো। তাদের কয়েক মাসের বেতনও বকেয়া ছিল। 

দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের এনে এখানে অল্প বেতনে কাজ করানো হতো। শুরুর দিকে হাতের কাজ করলেও ছয় মাস পর বেতন সামান্য বাড়িয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিনের সহকারী হিসেবে তাদের কাজ করানো হতো, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেআইনি। 

রানা প্লাজা, তাজরীন, ট্রাম্পাকোসহ এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়কর ঘটনা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সব কারখানায় নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম আইনে নিহত ও আহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের জন্য যে অপর্যাপ্ত অর্থের কথা উল্লেখ আছে, তা অতি জরুরিভাবে পর্যালোচনাপূর্বক একটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ণয়ের জন্য সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে পবা আরও বলেছে, সেজান জুস মূলত আমের জুস। সঙ্গত কারণেই সেখানে আমের ভর মৌসুমে শত শত টন আম ও পাল্পের মজুদ থাকার কথা। অথচ এই জুস তৈরিতে কোনো আম বা আমের নির্যাস ব্যবহার করার নজির ছিল না। সেজান জুস একটি জনপ্রিয় ও উন্নতমানের ব্র্যান্ডের কথা বলে লাখ লাখ ভোক্তাকে আমের জুসের নামে কেমিকেল খাওয়া হচ্ছে। এ কেমিকেল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ, যা একটি নীরব গণহত্যার সামিলও বটে। 

সংগঠনটি বলছে, আমরা এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আমরা কোনো কারখানা বন্ধের পক্ষে নই, আমরা চাই প্রতিটি কারখানায় সুরক্ষা সরঞ্জাম, শ্রমিক ও জন নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার নিশ্চয়তা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য বিল্ডিং কোড, পরিবেশ, শ্রম বিধিসহ প্রয়োজনীয় সব নীতিমালা অনুসরণ করে যেন কারখানাগুলো তৈরি হয়। 

সে মোতাবেক নিয়মের ব্যত্যয় যাতে না ঘটে, সেজন্য আইন ও বিধিমালা অনুসারে ফায়ার সার্ভিস, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদফতরসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যাতে নিয়মিত তদারকি করে এবং দ্রুততার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করে। পাশাপাশি এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তাও নিয়মিত হয়রানিবিহীন তদারকি করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে পবা আরও বলেছে, আমরা মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি নিহত ও আহতসহ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।

এমএইচএন/আরএইচ