ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা বা ওয়্যারলেস সঙ্গে থাকলেই কাউকে পুলিশ মনে করে কিছু না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ‍ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ।

তিনি বলেছেন, ডিবি পুলিশ সব সময় বা সব জায়গায় চেকপোস্ট বসায় না। সুতরাং পুলিশ পরিচয়ে কেউ সবকিছু নিতে চাইলে ভেরিফাই করুন। আশপাশে পোশাকে অন ডিউটিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হোন। ভুয়া ডিবি পুলিশের অপতৎপরতা রোধে সবার সচেতনতা ও দায়িত্ব দরকার।

সম্প্রতি ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে রাতে রাজধানী ও আশেপাশের বিভিন্ন জেলার সড়কে স্বল্প সময়ের জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটের পাইকার ও ক্রেতাদের ক্যাশ টাকা ডাকাতি করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে ডিএমপি।

তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় অস্ত্র ও পুলিশের সরঞ্জামসহ ডিবির জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চেকপোস্টের মাধ্যমে ডাকাতি করার প্রস্তুতির সময় তাদেরকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জাহিদ হাসান ওরফে রেজাউল, মানিক ব্যাপারী ওরফে দারোগা মানিক, ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও রুবেল সিকদার ওরফে রুস্তম।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি করে বন্দুক, চাপাতি, খেলনা পিস্তল কভারসহ, ওয়্যারলেস সেট, সোলাই রেঞ্জ, চাবিসহ এক জোড়া হ্যান্ডক্যাপ ও স্টিলের বাঁশি, দুটি লোহার বাটযুক্ত ছোরা, তিনটি ডিবি লেখা জ্যাকেট এবং নগদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ‍যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ আন্তঃনগর ডাকাত দলের সদস্য। তারা ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটে আগত ব্যাপারী ও ক্রেতাদের ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতাররা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে রাজধানী ও আশেপাশের বিভিন্ন জেলার সড়কে রাতে স্বল্প সময়ের জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের আশেপাশে ওত পেতে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন ও পরিবহনকারী ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। পরে ডিবি পরিচয়ে ওই টাকা পরিবহনকারী ব্যক্তিকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে দূরে ফেলে দেয়।

গ্রেফতারদের নামে ডিএমপিসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস ও জেল খেটেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে গরুর পাইকার, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কিংবা যে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করলে পুলিশকে জানান। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মানিস্কট সেবা নিন। মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেনে অলিগলি পথ এড়িয়ে চলুন। যেখানে সিসি ক্যামেরা আছে সেখানে বসে লেনদেন করুন।

গরুর গাড়ি, গরু কিংবা পশুর হাটে পাইকার ও ক্রেতার টাকা যেন কেউ ছিনতাই করতে না পারে সেজন্য ডিবি পুলিশসহ ডিএমপির অন্যান্য ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।

কার কাছে টাকা আছে তা কীভাবে চক্রের সদস্যরা জানে- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ব্যাংকে বা ব্যাংকের সামনে, যেখানে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয় সেখানে তাদের সোর্স থাকে। আবার গার্মেন্টেসে বেতন দেওয়ার সময় গাড়িতে টাকা আনা-নেওয়া করা হয়। এসব সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি করে ডাকাতির চেষ্টা করে।

আমরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নাম পেয়েছি। অন্যান্য চক্রের নামও জেনেছি। ঈদকে সামনে রেখে যাতে আর কোনো অপতৎপরতা তারা চালাতে না পারে সেজন্য আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জেইউ/ওএফ/এমএইচএস