রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে শহরের পাশেই হাতে নেওয়া হয় ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’। নতুন এই শহরে সব ধরনের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই ছিল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। কিন্তু নাগরিক পরিষেবা না থাকায় প্রকল্প এলাকা এখনো বাসযোগ্য হয়নি।

২৫ বছর আগে শুরু হওয়া এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয়ও দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাস্তবায়নাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মেয়াদ। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ‘বাসযোগ্য হতে আর কত সময় নেবে পূর্বাচল প্রকল্পটি?’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির নকশা পাঁচবার সংশোধিত হয়েছে। মেয়াদও বেড়েছে কয়েক দফায়। ১৯৯৫ সালে প্রায় ৬ হাজার ২২৭ একর জায়গায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু করে রাজউক। দীর্ঘ সময় পর এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ফিজিক্যাল ও ৬৫ শতাংশ ফাইন্যান্সিয়াল অগ্রগতি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে পুরো প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে।

তবে বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে প্রকল্পের যতটুকু কাজ হবে, সেখানেই প্রকল্প শেষ করা হবে। পরবর্তী কাজের জন্য ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মূলত জমি নিয়ে মামলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এই প্রকল্পের বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী পূর্বাচলে পাঁচ কাঠা ও তিন কাঠার যত প্লট আছে, সেগুলো যদি ডুয়েলিং ইউনিট পায়, তবে সেখানে ডুয়েলিং ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। একটা অ্যাপার্টমেন্টে সাধারণত গড়ে চার জন বসবাস করেন। অনুমান করা হয়েছে, পূর্বাচলে ২৫ লাখের মতো মানুষ বসবাস করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পের নকশা পাঁচবার সংশোধিত হয়েছে। তবে ঘনত্বের জন্য সংশোধন হয়নি। পূর্বাচলে এখনও সেভাবে বাসস্থান গড়ে ওঠেনি। তাই এখনও কার্যকরী নানান পরিকল্পনা হাতে নেওয়া সম্ভব। নাগরিক সুবিধা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

পূর্বাচল প্রকল্পের বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজগুলো শেষ করতে। এ বিষয়ে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পূর্বাচল নতুন শহরের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক আরও বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

বিস্তারিত জানতে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিককে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে পূর্বাচল প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূর্বাচলে কাজ শুরু হওয়ার ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। প্রথম দিকে এটার নাম ছিল নিউ টাউন। আসলে নিউ টাউনটা হবে যেটা বড় টাউন থেকে দূরে এবং মাঝখানের জায়গাগুলোতে রুরাল এরিয়া আছে। ঢাকা শহর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত অনেকাংশে নগরায়ন হয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, পূর্বাচল মার্কেটে আসতে দেরি করেছে। আর এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট, আবাসন কোম্পানিগুলোও বাধাহীনভাবে শহরকে এক্সটেন্ড করেই যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পূর্বাচলে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বাইরের অবকাঠামোগত যে উন্নয়নের কথা ছিল (সড়ক, অবকাঠামো, গ্যাস, পানি ইউটিলিটি সার্ভিস) সেগুলো হতে অনেক দেরি হওয়াতে পূর্বাচলের ডেভেলপমেন্ট এখনও হয়নি। আর আগে যেগুলো করা হয়েছিল সেগুলোর অনেক কিছুই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বারবার নকশার বদলের ফলে যে সমস্যাটা হচ্ছে সেটা হলো, পূর্বাচলে শুরুর যে লে-আউট আছে তার ওপর প্রভাব পড়ছে। তাই যত দেরি হচ্ছে, এটার পরিকল্পনা ততো কাটাছেঁড়া হচ্ছে। পূর্বাচলে হাউজিংয়ের যে চাহিদা, তা মেটাতে গিয়ে রাজউক কেন এত দেরি করছে, এটা একটা প্রশ্ন। তাদের উচিত সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাজের মান ঠিক রেখে দ্রুত চালু করা।

এএসএস/এমএইচএস/এনএফ