আটক করে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীর বাসা থেকে বের হন ব্যক্তিগত কাজে। পরে রাত আটটা ১০ মিনিটের দিকে হেলেনা নিজ গাড়িতে করে বাসায় ফেরেন। লিফটে করে পাঁচতলায় নিজের ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরপরই ভবনের গেটে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একটি গাড়ি পৌঁছায়।

গাড়ি থেকে বের হয়ে র‍্যাব ১ এর দুই সদস্য ভবনের লিফটের দিকে এগিয়ে যান। এ সময় বাসার সিকিউরিটি গার্ড তাদের পরিচয় জানতে চান। র‍্যাব সদস্যরা তাকে বলেন আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, কোনো সমস্যা নেই। এ কথা বলে তারা লিফটে করে পাঁচতলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে চলে যান। 

এর কিছুক্ষণ পর র‍্যাবের আরও দুই সদস্য ভবনে প্রবেশ করে সিকিউরিটি গার্ডকে নিজেদের পরিচয় দিয়ে লিফটে করে পাঁচতলায় যান। তখন থেকেই র‍্যাব-১ এর সদস্যরা হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে অভিযান শেষে ঢাকা পোস্টকে এমনটিই জানান ভবনের সিকিউরিটি গার্ড মো. রুস্তম। তিনি জানান, প্রথম দফায় র‍্যাবের চার সদস্য প্রবেশ করার পর তাকে ভবনের প্রধান গেট আটকে দিতে বলা হয়। 

র‍্যাব সদস্যদের কথামতো ভবনের গেট আটকে দেন সিকিউরিটি গার্ড রুস্তম। এর ৩০ মিনিট পর র‍্যাবের আরও দুটি গাড়ি গেটের সামনে আসে। তখন কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ১০ থেকে ১২ জন র‍্যাব সদস্য ভবনে প্রবেশ করেন। আর রাত নয়টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে বাসার সামনে উপস্থিত হন

তিনি আরও জানান, অভিযানের পুরো সময় তারা নিচতলায় গেট বন্ধ করে বসেছিলেন। তখন তাদের বাইরে আসা-যাওয়া নিষেধ ছিল। অভিযান চলাকালে ভবনের উপরে উঠতেও নিষেধ করেছিলেন র‍্যাব সদস্যরা। র‍্যাব সদস্যদের নির্দেশ অনুযায়ীই তারা নিচতলায় বসেছিলেন। অভিযানের সময় ভবনে একজন কেয়ারটেকারসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।

এদিকে র‍্যাব-১ সূত্রে জানা যায়, বাসার ভেতর র‍্যাব সদস্যরা প্রবেশ করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পরে তাকে শান্ত করে র‍্যাব সদরদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে অভিযান শুরু করা হয়। 

অভিযান চলাকালে একে একে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে হরিণের চামড়া, বিদেশি মদ, বৈদেশিক মুদ্রা, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম, ওয়াকিটকি সেট, মোবাইল ফোন ও চাকু জব্দ করা হয়। এ সময় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করেন র‍্যাব কর্মকর্তারা।

অভিযানের সময় ভবনটির নিচতলায় কয়েকজন সাদা পোশাকের র‍্যাব সদস্যকে দেখা যায়। এ সময় তারা ভবনের ভেতরে কাউকে প্রবেশ ও বের হতে দেননি। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের আগে অভিযান সম্পর্কে তারা গণমাধ্যমকর্মীদের কোনোকিছুই বলেননি।

রাত পৌনে ১০টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। ভবনটিতে র‍্যাবের তিন নারী সদস্য প্রবেশ করার পরই মূলত এ গুঞ্জন শুরু হয়। তখন র‍্যাবের বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, অভিযানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় মাদক পাওয়া গেছে এবং তাকে আটক করা হচ্ছে।

রাত ১০টার পর থেকেই হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের প্রস্তুতি শুরু করে র‍্যাব। তাকে নিয়ে যেতে তখন র‍্যাব সদরদফতরের একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস ভবনের সামনে এসে দাঁড়ায়। পরপর আরও দুটি গাড়ি করে র‍্যাব-১ এর ১০ থেকে ১২ জন সদস্য আসেন এবং অভিযান এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেন।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ভবনের গেট খুলে দেওয়া হয়। এর আধঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে র‍্যাবের দুই নারী সদস্যসহ অন্যান্য সদস্যরা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে গাড়িতে তোলেন এবং সদরদফতরে নিয়ে যান।

অভিযান শেষে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, জব্দ করা আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করেছি। তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া, মোবাইল ফোন, বৈদেশিক মুদ্রা ও চাকু জব্দ করা হয়েছে। তাকে র‍্যাব সদরদফতরে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হবে।

এমএসি/আরএইচ