রাজধানীর উত্তরায় শিন-শিন জাপান হাসপাতালের আইসিইউতে দুই নার্স ও এক ওয়ার্ড বয়কে ছুরিকাঘাতে আহত করা রোগী সবুজ পিরিসি (৩৫) মারা যাওয়ার ঘটনার রহস্য কাটছে না।

এদিকে পুলিশ হাসপাতাল ও সবুজের পরিবারের অভিযোগকে আমলে নিয়ে তদন্ত করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে মামলার তদন্ত চলছে।

দুই নার্স, এক ওয়ার্ড বয় আহত ও সবুজ পিরিসি মারা যাওয়ার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। দুই পক্ষই উত্তরা পশ্চিম থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে।

উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুলাই সবুজ শিন-শিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় নার্স মিতু রেখা (২৪), ইমোনা আফরোজ ওরফে কাকলির (৪৫) ও ওয়ার্ড বয় মো. সাগরকে (২৫) ছুরিকাঘাতে আহত করে। এর ঠিক চার দিন পর সবুজ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সবুজ মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় হত্যার অভিযোগ করে বলা হয়, সবুজকে অক্সিজেন সিলেন্ডার দিয়ে প্রচুর আঘাত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা না দিয়ে বারান্দায় ফেলে রাখে। পরে তারা খবর পেয়ে সবুজকে ২২ জুলাই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সবুজের মৃত্যু হয়৷

এদিকে শিন-শিন জাপান হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ করে, সবুজ কোনো কারণ ছাড়া তাদের দুই নার্স ও ওয়ার্ড বয়কে ছুরিকাঘাতে আহত করে।

শিন-শিন জাপান হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সবুজের ছুরিকাঘাতে আহত নার্স মিতু রেখার (২৪) অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। সর্বশেষ তার অবস্থা আরও অবনতি হওয়া তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইমোনা আফরোজ ওরফে কাকলির (৪৫) অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাকে এখনো আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ওয়ার্ড বয় মো. সাগর (২৫) এখন সুস্থ রয়েছেন।

শনিবার (৩১ জুলাই) দুই মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদুর হাসান বলেন, দুই নার্স ও ওয়ার্ড বয় আহত হওয়ার পর ২৩ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় একটি মামলা করে। তখন আমরা অপেক্ষা কর ছিলাম যে সবুজ সুস্থ হলে তাকে গ্রেফতার করে এ ঘটনার বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।

কিন্তু ২৬ জুলাই সবুজ মারা যাওয়ায় এ ঘটনার মোড় পাল্টে যায়। সবুজের পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করে বলে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তাকে নাকি করোনার ইনজেকশন দেওয়া হতো, যার কারণে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে দুই নার্স ও ওয়ার্ডবয়কে ছুরিকাঘাত করেছে বলে অভিযোগ করে।

তিনি বলেন, আমরা এখন দুই পক্ষের অভিযোগকে আমলে নিয়ে তদন্ত করে যাচ্ছি। এখনো এ বিষয়ে কোনো সমাধানে আমরা আসতে পারিনি, আসলে ঘটনার রহস্যটা কি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কিছুই আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। এছাড়া যে দুই জন নার্স হাসপাতাল আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতার অপেক্ষা করছি। তারা সুস্থ হয়ে গেলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে গ্রেফতার বা আটক করিনি। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে এ ঘটনার সংশ্লিষ্ট যে কাউকে গ্রেফতার করা হতে পারে- বলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) গভীর রাতে শিন-শিন জাপান হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা করোনা রোগী মো. সবুজ নার্সদের কাছে ঘুমের ওষুধ চান। কিন্তু তার প্রেসক্রিপশনে লিখা না থাকায় কর্তব্যরত নার্স মিতু ও কাকলি ঘুমের ওষুধ দিতে পারবেন না বলে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান সবুজ। ঘুমের ওষুধ না দেওয়ার কারণে তিনি নার্স মিতু, কাকলি ওয়ার্ডবয় সাগরের সঙ্গে ধস্তাধস্তির শুরু করে দেন।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবুজ নার্স মিতুকে আইসিইউতে রাখা ফল কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করেন সবুজ। নার্স মিতুর পেটে চারবার ছুরিকাঘাত করার পর তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে কাকলি। আর এসময় কাকলির পেটেও ছুরিকাঘাত করে তাকে আহত করে সবুজ। এছাড়া এই ধস্তাধস্তির ঘটনায় ওয়ার্ড বয় সাগরও আহত হয়।

এদিকে ঘটনার পর শিন শিন জাপান হাসপাতালে সবুজের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৬ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এমএসি/এসএম