ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল ৩ এলাকায় ২০ সদস্যের একটি মশক নিধন টিম ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি ঢুকছে। পিঠে বাঁধা আছে মশার লার্ভা ধ্বংসের ওষুধের পাত্র। একজন হ্যান্ড মাইকে ডেঙ্গু বিস্তার রোধে করণীয় বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার লার্ভা ধ্বংসে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হচ্ছে বাড়ির মালিকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে অভিযানের ফলে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। তবে বাসিন্দারা বলছেন, ডিএনসিসি কেবল জরিমানা করাতেই ব্যস্ত। পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত মশক নিধন অভিযান তাদের নেই। এক দিন ওষুধ দিলে তিন দিন খবর থাকে না।

রোবববার উত্তর সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডে অভিযান চালান ওই ওয়ার্ডের সুপারভাইজার সুলতান ফরাজী। তিনি দলবল নিয়ে ১৪১/১ নম্বর বাড়িতে ঢুকে দেখতে পান নিচ তলার ফ্লোরে জমে আছে পানি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা আছে। বিষয়টি দেখে পালিয়ে যান বাড়ির কেয়ারটেকার। পরে বাড়ির মালিক সিরাজুল ইসলাম এসে ভুল স্বীকার করেন এবং আগামীতে এমন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ওয়ার্ড সুপারভাইজার সুলতান ফরাজী বাড়িটির সামনে ‘এ বাসায় এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে দেন এবং আগামীতে লার্ভা পাওয়া গেলে বড় ধরনের জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করেন।

দিনভর এভাবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজ করেন সিটি করেপোরেশনের মশকনিধনকর্মীরা।

গতকাল (শনিবার) এই অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেন ৩ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল বাকী। এ সময় তিনি সাতটি মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। 

গত কয়েক বছরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানা প্রকল্প, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী এ বছর দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধন কাজে কিছুটা গুরুত্ব দিয়েছে। বাড়িয়েছে এ খাতের বরাদ্দও। এরপরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এতে শঙ্কিত নগরবাসী বলছে, সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শুধু অভিযান আর জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিটি করপোরেশন

রাজধানীর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন খবরে দেখি, এডিসের লার্ভা পাওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে, মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের লোকেরা বিভিন্ন প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তো কমছে না। শুধু জরিমানা করলেই কি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব শেষ? মশক নিধন কর্মীদের তো আমরা ওষুধ ছিটাতে দেখি না। তারা যেমন জরিমানা করছে, তেমনি মশা মারার পদক্ষেপও নিতে হবে। অলিগলি সব জায়গায় মশা মারার ওষুধ ছিটাতে হবে। তা না করে তারা শুধু জরিমানাতেই আটকে আছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনাকালে যেন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় কারও মৃত্যু না হয়, সেজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলের ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে ২৭ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী মশক নিধনে চিরুনি অভিযানসহ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবন ও বাসা-বাড়িতে গিয়ে মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটাচ্ছে। সেই সঙ্গে অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে।

শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধকল্পে মোবাইল কোর্টে ৩৫টি মামলায় সর্বমোট ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আজও (রোববার) অভিযান চলছে। এভাবে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানিয়েছেন, ডিএসসিসির প্রতিটি অঞ্চলে নিয়মিত ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। আজও প্রতিটি অঞ্চলে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল (শনিবার) অভিযানে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩টি নির্মাণাধীন ভবন ও বাসা-বাড়িকে এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জুলাই মাসেই ২২৮৬ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে

করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। জুলাই মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। শুধু জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের ৯৯ শতাংশই ঢাকায়। গত ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যেই এ চিত্র উঠে আসে।

এদিকে রোববার দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় জ্বর হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এএসএস/এসএসএইচ/জেএস