গাড়ির নিচে আটকে আছে নিহত পুলিশ সদস্যের ছেঁড়া প্যান্ট

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে গাড়ি চাপায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য হেলালের মৃত্যুর ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন গাড়িতে থাকা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) পরিচালক প্রফেসর তাহসিনা আক্তার।

রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিচালক বলেন, সকাল ৯টায় আমার অফিসে যাওয়ার কথা। কিন্তু গাড়ি না আসায় আমি অফিসে ফোন দেই। তারা জানায় গাড়ি ঢাকার বাইরে গেছে। আবার জানতে পারলাম সে (ড্রাইভার) নবীনগর আছে।

প্রফেসর তাহসিনা আক্তার বলেন, পরে আমি অন্য গাড়ি ম্যানেজ করতে বলি। গাড়ি ম্যানেজও হয়। সাড়ে ১০টার সময় দেখি আমার বাসায় গাড়ি এসেছে। গাড়ি চালানোর সময় চালককে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না। বারবার ফোন রিসিভ করছিল আর এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি তাকে বারবার বলেছি, কি সমস্যা এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছ কেন। সে আমার কোনো কথাই আমলে নেয়নি। তার গাড়ি থেকে মাছের গন্ধ বের হচ্ছিল।

নায়েমের পরিচালক তাহসিনা আক্তার

তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে একজন ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছিলেন। দেখলাম তিনি দাঁড়ানোর জন্য সিগনাল দিয়েছেন। কিন্তু ড্রাইভার বিল্লাল সিগনাল অমান্য করে পুলিশের ওপর দিয়ে গাড়ি তুলে দিল। গাড়িতে তখন আমি ও আমার সহকর্মী স্বপন সাহা ছিলাম। ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমি ও আমার সহকর্মী তাকে বললাম, এটা তুমি কি করলা। গাড়ি থামাও, গাড়ি থামাও। কিন্তু সে আর গাড়ি থামায় না। কোনোভাবেই তাকে বোঝাতে পারিনি। গাড়ি সে থামাল না। একপর্যায়ে সে ঢাকা কলেজের পাশ দিয়ে ঢুকে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়।

পরিচালক আরও জানান, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাই। পরে পুলিশ এলে আমরা বিস্তারিত জানাই। এর আগে গাড়ির মালিককে ফোন দেই, সেও আসে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।

আটক গাড়ির মালিক শামীম খান

আটক গাড়ির মালিক শামীম খানকে যখন পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার গাড়ি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ভাড়া দেওয়া আছে। মাসে ২২ দিন চুক্তিতে নায়েমে গাড়ি ভাড়া দেওয়া আছে। গতকাল (শনিবার) বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় আমি নওগাঁয় একটি ট্রিপে বিল্লালকে পাঠাই। আজ সকালে সে নওগাঁ থেকে আসতে দেরি করে। পরে নায়েম কর্তৃপক্ষকে ফোন করে জানাই, আসতে একটু দেরি হবে। কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কোনো কথা শুনতে চায় না। পরে সে (বিল্লাল) নায়েমের পরিচালক তাহসিনা আক্তার ও আরও একজনকে নায়েমের অফিসে আনতে যায়। পরে আমাকে অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। আপনার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। আমি এসে শুনি একজন ডিউটিরত পুলিশ সদস্যকে চাপা দিয়ে সে মেরে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, নায়েমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন) তাহসিনা জানান, গাড়িতে যখন তারা উঠেছিলেন তখন সে খুব রাফ ভাবে (অতিরিক্ত গতি) গাড়ি চালাচ্ছিল। যখন পুলিশকে চাপা দেয় চালক, তখন ম্যাডাম ও স্যার তাকে গাড়ি থামাতে বলেন। কিন্তু সে না থামিয়ে সরাসরি ঢাকা কলেজের পাশে নায়েমের অফিসের পার্কিংয়ে গাড়ির চাবি রেখে চলে গেল। এখন যে তারা এতকিছু বলছে, তাহলে চালক পালাল কীভাবে। এখানে আনসার সদস্যরা ডিউটি করে। কেন চালককে আটক করল না। এখন আমার হাতে হাতকড়া কেন? আমি কি দোষ করেছি। আমি কেন জেল খাটব। এখন সব বড় বড় কথা বলছে। অথচ তাকে কেন আটকাতে পারল না। এখন সব দোষ মালিকের। মালিক কি পুলিশকে চাপা দিয়ে মেরেছে?

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ এসএম শামীম

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এসএম শামীম সাংবাদিকদের জানান, আপনারা জানেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে আমাদের সহকর্মী ট্রাফিক পুলিশ সদস্য, তিনি হাসপাতালের সামনেই ডিউটি করছিলেন। মাইক্রোবাসটি সিগনাল অমান্য করে হেলালের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা পরিচালকের মাধ্যমে জানতে পারি ঘাতক গাড়িটি এখানে আছে। আপনারা দেখেছেন আমার পেছনে যে গাড়িটি রয়েছে এই মাইক্রোবাসটি হেলালকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। গাড়ির নিচে আমার সহকর্মীর ছেঁড়া প্যান্টের অংশ এখনও রয়েছে। আমরা ঘাতক চালককে ট্রেস করেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলছি না। মালিককে আটক করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। তেজগাঁও ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার এসেছেন। তারা তদন্ত করে দেখছেন।

পুলিশ সদস্যকে চাপা দেওয়া মাইক্রোবাসটি

রোববার বেলা ১১টায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহত পুলিশ কনস্টেবল হেলালকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এসএএ/এসএসএইচ