ঢাকায় বসবাসরত বস্তিবাসীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট করে দিচ্ছে সরকার। তবে বিনামূল্যে নয়, চার হাজার ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় থাকবেন তারা। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৬৭৩ বর্গফুট। প্রতিদিন ১৫০ টাকা কিংবা সপ্তাহে এক হাজার ৫০ টাকা করে ফ্ল্যাটের ভাড়া পরিশোধ করা যাবে। 

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বস্তিবাসীর জন্য নির্মিত তিনশ ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

২০১৭ সালে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই বছর ২৬ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এ প্রকল্পে। 

মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে বস্তিবাসীর জন্য সর্বমোট দশ হাজার ফ্ল্যাট নির্মিত হচ্ছে। মঙ্গলবার তিনশ পরিবারের হাতে বরাদ্দপত্র দেওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে দেওয়া হবে আরও এক হাজার একটি পরিবারকে। ওই বস্তিতে থাকা দশ হাজার পরিবার নতুন ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাবেন।

জাতীয় গৃহায়ন অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী বলেন, ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে পাঁচটি ভবনের তিনটি আগামীকাল (মঙ্গলবার) উদ্বোধন হচ্ছে। বাকি দুটি পরবর্তী সময়ে হবে। এ পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট থাকবে। সেখান থেকে মঙ্গলবার ৩০০টি হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তী প্রকল্পে এক হাজার একটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ধাপে ধাপে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। 

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী বস্তি এলাকায় ভবনগুলো নির্মাণ করে সেখানে বসবাসরত বস্তিবাসীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখন যেখানে পাঁচটি ভবন করা হচ্ছে, সেখানে যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল তাদেরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বস্তিবাসীদের মাঝে জরিপ করে দেখা হয়েছে, তারা দুই রুমের টিনশেড বাসায় কত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ভাড়া দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে। 

মঙ্গলবার বস্তিবাসীদের হাতে ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র দেওয়া ছাড়াও উদ্বোধন করা হবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুই হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট। এ প্রকল্পের অধীনে ছয় বিঘা জমির ওপর ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ তলার পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানকার ফ্ল্যাটগুলো দুই কক্ষবিশিষ্ট এবং আয়তন ৬৭৩ থেকে ৭২০ বর্গফুট। 

প্রতিটি ভবনে রয়েছে কমিউনিটি হল, দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিড়ি। এ ছাড়াও রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর ও ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন সুবিধা। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করা হবে। বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্ল্যাটে বসবাস করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।  

একই দিন প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাজধানীর মতিঝিল, আজিমপুর, মিরপুর, মালিবাগ ও তেজগাঁও এলাকায় পাঁচটি আবাসন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এ প্রকল্পের অধীনে আজিমপুর সরকারি কলোনিতে ১৭টি ২০ তলা ভবনে এক হাজার ২৯২টি, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে ২৮৮টি, মালিবাগে চারটি ২০ তলা ভবনে ৪৫৬টি এবং মতিঝিলে পাঁচটি ২০ তলা ভবনে ৩৮০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আটতলার দুটি আবাসিক ভবন। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফ্ল্যাট বরাদ্দ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের সুবিধা বেড়েছে। ৩০০ বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট বিশাল একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে দরিদ্রদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে গভীর ভালোবাসা, তা প্রকাশ পেয়েছে। 

এইউএ/আরএইচ