সুমাইয়া

স্বপ্ন ছিল মেয়েকে বানাবেন চিকিৎসক। মেয়ের বাবা দর্জির কাজ করতেন। নিজে কারখানায় কাজ করে মেয়েকে বানাতে চেয়েছিলেন মানুষের সেবক। সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলো আগুন। 

গত ৮ জুলাই হাসেম ফুডসের জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ফিরোজা বেগম। তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ১৩ বছরের মেয়ে সুমাইয়া। মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে স্বপ্ন। আশ্রয় হয়েছে মামা-মামীর কাছে। 

মামা লিটন ও মামীর সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সুমাইয়া এসেছিল মায়ের লাশ নিতে। মর্গের সামনে ‘মা মা’ করে তার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মামী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তার কান্না থামাতে পারেননি।

বুধবার (৪ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে ফিরোজার লাশ তার স্বামী জায়েদের কাছে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।

ফিরোজার ভাই লিটন বলেন, আমার বোন এক মাস আটদিন কাজ করেছিল কারখানায়। এরমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত হয় ফিরোজা।

ফিরোজার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। স্বামী জায়েদ দর্জির কাজ করেন। একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া।  

মাকে হারিয়ে সুমাইয়া এখন দিশেহারা। বর্তমানে মামা-মামীর সঙ্গে রূপগঞ্জে থাকে। মা ফিরোজা তাকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিলেন। মায়ের লাশ নিতে বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে অপেক্ষা করতে থাকেন।

মুন্না, সাথী, পান্না তিন ভাইবোন। এক সঙ্গেই কাজ করতো কারখানায়। আগুন লাগার পর সাথী নেমে যায় কারখানার তিনতলা থেকে। তবে অন্যরা চার তলা থেকে নামতে পারেনি। পান্না সেদিন কারখানায় যায়নি। সাথী উচ্চ মাধ্যমকি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। তাদের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই হত্যার কোনো বিচার হবে না। দুই লাখ টাকা দিয়ে আমরা কী করব? আমিতো আমার সন্তানকে ফিরে পাব না।

তিনি লাশ পাবার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। লাশ পেয়ে তাই পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। 

প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় ৪০০-এর বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়ক করার প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।
 
প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। সবমিলিয়ে, এ ঘটনায় ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। 

ঢামেকে বুধবার হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে সিআইডি ও ঢাকা জেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়।  

ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পুলিশ তাদের চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে মালিক আবুল হাসেমসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হাসেমের দুই ছেলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

এইউএ/এইচকে