ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণিকে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইসসহ আটক করেছে র‌্যাব। তবে র‍্যাবের অভিযানটা এতো সহজ ছিল না।

বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে পরীমণির বাসার চারপাশে অবস্থান নেয় র‍্যাব সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পর র‍্যাবের সাদা পোশাক ও পোশাকধারী বেশ কয়েকজন সদস্য তার গেট খুলতে বললেও প্রায় আধ ঘণ্টার গেট বন্ধ রাখেন পরীমণি।

অভিযানে অংশ নেওয়া একজন র‍্যাব সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযানে যাওয়ার আগে থেকেই পরীমণি তার ভুল ও অপরাধ বুঝতে পারেন। সেগুলো ঢাকতে নানা ধরনের নাটক করে অভিযান বন্ধ করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, অভিযানের সময় বেশ কয়েকবার পরীমণি প্রশ্ন করে যে, ‘কেন এই অভিযান?’ র‍্যাব সদস্যরা তাকে তার অপরাধ ও অভিযান সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন। তবে নিজের অপরাধ ধরা পড়ায় তিনি ফেসবুক লাইভে সহকর্মী, সাংবাদিক ও পরিচিতদের দ্রুত তার বাসায় আসতে বলে পাবলিক সিম্প্যাথি নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর আমরা তাকে লাইভ বন্ধ করতে বলি। তার অপরাধের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে এগুলো তাকে জানাই।

তিনি আরও বলেন, অভিযান চলাকালে তিনি প্রচুর অস্থিরতা দেখাচ্ছিলেন। বিভিন্ন বিষয় অস্বীকার করছিলেন। অভিযানের সময়ে তিনি ড্রয়িং রুমেই বসা ছিলেন। সঙ্গে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন। তারা নিজেরা অভিযান দেখেছেন। পরীমণি নাটক করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে তাতে কাজ হয়নি।

তাকে বর্তমানে র‍্যাব সদরদফতরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে রাত ৮টা ১১ মিনিটে তাকে আটক করে বাসা থেকে নিয়ে বের হন র‍্যাব সদস্যরা। পরে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তাকে র‍্যাব সদর দফতরে নেওয়া হয়।  

এর আগে, বিকেল চারটায় বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে পরীমণির ফ্ল্যাটে অভিযানে যান র‍্যাবের সদস্যরা। তবে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় তিনি র‍্যাব সদস্যদের গেটে আটকে রেখে ফেসবুক লাইভে যান। লাইভ শেষে তিনি গেট খুলে দেন।

অভিযানে পরীমণির বাসা থেকে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া এক র‌্যাব কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, অভিযানে প্রথম দিকে পরীমণি র‍্যাবকে সহযোগিতা করেননি। তার ঘর তল্লাশি করে ফ্ল্যাটের কেবিনেট থেকে বিদেশি মদ, লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) এবং আইস উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে তার ড্রয়িং রুমের কাভার, শো-কেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুল সংখ্যক মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। 

অভিযানে অংশ নেওয়া একজন জানান, পরীমণির বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মদ নেই। তার কাছে দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়।

গত ৯ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি নিজেই। পরে ১৪ জুন সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। 

এমএসি/এআর/ওএফ