গার্মেন্টস শ্রমিক হয়রানির জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের হয়রানির জন্য দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ। একইসঙ্গে সংগঠনটি শ্রমিকদের যাতায়াত ব্যয় ও ঝুঁকি ভাতা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং চাকরিরত শ্রমিকের করোনা সংক্রমণে মৃত্যুতে সরকারি কর্মচারীদের সমান ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণপরিবহন বন্ধ রেখে কারখানা খোলার মতো দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। ঈদের অনেক আগেই ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে সব শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে শ্রমিকরা ঈদের ছুটিসহ ১৭ দিনের ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান না করে গ্রামের বাড়িতে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় কর্মস্থলে অবস্থানকারী শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন চালানোর প্রতিশ্রুতিতে কারখানা খোলার অনুমোদন নিয়ে সেই শর্ত প্রকাশ না করে একদিনের নোটিশে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত প্রচার করা মালিকদের পরিকল্পিত প্রতারণামূলক কৌশল। আর ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খোলার নির্দেশনা দিয়ে ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় জারি করা প্রজ্ঞাপনে শর্তের কথা উল্লেখ না করে কিংবা গণপরিবহন চলাচল সম্পর্কিত নির্দেশনা না দিয়ে সরকারও চূড়ান্ত দায়িত্বহীন আচরণ করেছে।
তারা বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা জানেন যে কারখানা খোলার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা চাকরি হারানোর ভয়ে যেকোনো মূল্যে কর্মস্থলে উপস্থিত হবে। তাই তারা ৩১ জুলাই রাতের আগে প্রকাশ্যে বলেননি ৫ আগস্ট পর্যন্ত কাজে যোগ দিতে না পারলেও চাকরি হারানোর ভয় নেই। বরং তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, ফোন করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে শ্রমিকদের ১ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে শ্রমিকদের একদিনের মধ্যে নৌকা, ফেরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনে করে, হেঁটে অবর্ণনীয় কষ্ট এবং তিন-চার গুণ বেশি খরচ করে কর্মস্থলে আসতে হয়েছে। কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শ্রমিকদের এ হয়রানি আর ঝুঁকির দায় মালিকরা এড়াতে পারে না। আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে শ্রমিকদের হয়রানির জন্য দায়ীদের শাস্তি না হলে শিল্প মালিকদের সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করার প্রবণতা আর শ্রমিকদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মালিকরা বিধিনিষেধের কারণে বন্ধের দিনগুলোর মজুরি কেটে নেওয়ার চক্রান্ত করছে, বিভিন্ন কারখানায় নানা অজুহাতে অনেক শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের হীন প্রচেষ্টা স্কপ সহ্য করবে না। চাকরিরত শ্রমিকের করোনা সংক্রমণে মৃত্যুতে সরকারি কর্মচারীদের সমান ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং করোনাকালে যাতায়াতের অতিরিক্ত ব্যয় প্রদানের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে মালিকদের যেকোনো অপচেষ্টায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় তাদেরই বহন করতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- স্কপ যুগ্ম সমন্বয়কারী শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অর্থ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসাইন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দফতর সম্পাদক কামরুল হাসান, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার প্রমুখ।
এমএইচএন/এসএসএইচ