অতিমারিতে যুব বেকারত্ব বেড়ে যাবার শঙ্কা সত্যি হতে চলেছে। দীর্ঘদিন সশরীরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জে দেশের তরুণ সমাজ মানসিক ও আর্থ-সামাজিক গভীর সংকটপূর্ণ সময় পার করছে।

বুধবার (১১ আগস্ট) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে এমন শঙ্কার কথা জানায়।

১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অতিমারিকালে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৯টি সুপারিশও করে সংস্থাটি।  

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে করোনা অতিমারির কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার ১৬ মাস পার হলেও সেগুলো খোলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সমন্বিত ও কার্যকর কোনো কর্মপরিকল্পনা নেওয়া যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসের চেষ্টা করা হলেও কারিগরি দক্ষতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে তা অনেকাংশেই সফল হয়নি। বরং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন এক বৈষম্যের মুখোমুখি করেছে। 

তিনি আরও বলেন,বেশ কিছু গবেষণা বলছে- গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং ব্যবহারের দক্ষতা নেই ৮৭ শতাংশ পরিবারের। ফলে গ্রামীণ ও আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ধনী-গরীব ও শহর-গ্রামের মধ্যে শিক্ষা পাবার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে। যা সত্যিই হতাশার।

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার তথ্যানুযায়ী অতিমারির থাবায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাক্রমে ১৯ এবং ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে (২৬ শতাংশ)। বিপুল সংখ্যক এ শিক্ষার্থীদের কিভাবে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা হবে? আদৌ ফিরিয়ে আনা যাবে কিনা? সেটি নিয়েও কারও মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষাখাতের নতুন এসব চ্যালঞ্জে মোকাবিলায় নতুন করে যে বাড়তি বিনিয়োগ বা সহায়তা প্রয়োজন তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ এখনও দৃশ্যমান নয়।

ড. জামান বলেন, অতিমারির প্রভাবে গত বছরই যুব-বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হওয়ার যে আশঙ্কা আন্তর্জাজাতিক শ্রম সংস্থা করেছিল, এতদিনে তা আরও বেড়েছে এটি অনায়াসে বলা যায়। অতিমারিতে কাজ হারানো মানুষের বড় অংশই তরুণ ও যুবক। এদের বেশিরভাগই আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী- যাদের জন্য সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিত বড় ধরনের কোনো সহায়তা এখনও অনুপস্থিত। শুধু চাকরি হারানোই নয়, অতিমারি চাকরি বাজারে নতুন ধরনের পরিবর্তনও নিয়ে এসেছে, যেখানে খাপ খাওয়াতে প্রযুক্তিগত ও কারিগরী দক্ষতার প্রয়োজন বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

তিনি বলেন, করোনা সংকটে বহু তরুণ স্বেচ্ছাসেবার অনন্য নজির স্থাপন করলেও অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন উদ্যোগে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগে স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। 

অতিমারির এ সময়ে তরুণদের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশ নিশ্চিত করতে টিআইবির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-

শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ এর টিকা দিয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিদ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে;

স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করে পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ব্যবস্থা নিতে হবে;

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। 

স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের যথাযথ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে;

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার পাশাপাশি করোনায় যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সেগুলো চালুর উদ্যোগ;

কারিগরি ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করা;

সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে অবিলম্বে সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করা। নতুন বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে কোভিড অতিমারির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে;

সব চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা

তরুণসমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা। 

আরএম/এসএম