রামিসা তাবাসসুম আলিনা

রাজধানীর ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী রামিসা তাবাসসুম আলিনা (১৯) এক ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন যৌতুকের দাবিতে স্বামী নির্যাতন করেছে তাকে। তবে আলিনার স্বামী তানভীর কামাল তন্ময় জানান তার (আলিনার) এসব অভিযোগ নিছক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় আলিনা এসব অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের পাঁচ মাসের মাথায় চলতি বছরের ১২ মার্চ তন্ময়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরে ২০ মার্চ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বামী তাকে রাজধানীর আদাবরের একটি বাসায় নিয়ে যায়। বিয়ের তিন দিনের মাথায় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আট লাখ টাকা দেনা শোধের কথা বলে নিয়ে নেয় তন্ময়। 

ভিডিও বার্তায় আলিনা আরও জানায়, গত ২৭ মার্চ আবার তন্ময় ও তার মা আলিনার কাছে ৭০ লাখ টাকা দাবি করেন। তন্ময় উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাবেন, সেখানে এ টাকা খরচ হবে। তাই এই টাকা তন্ময় তার কাছে দাবি করে। এই টাকা দাবি করে তন্ময়ের পক্ষ থেকে আলিনাকে বলা হয়, তার নানুর বাসার লোকজনের অনেক টাকা আছে। তাই তন্ময়ের উচ্চশিক্ষার জন্য এই টাকা এনে দিতে। কিন্তু তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় আলিনাকে অমানুষিক মারধর করেন তন্ময় ও তার মা। এরপর থেকে তার ওপর নিয়মিত নির্যাতন করেই যাচ্ছিল তন্ময় ও তার পরিবার।

সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই আলিনাকে মারাত্মক মারধর করেন তন্ময়। যার কারণে আলিনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। এ ঘটনার পরও স্বামীর সঙ্গে সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায় সেই চেষ্টা করেছেন আলিনা। কিন্তু এতে ব্যর্থ হয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে যান। কিন্তু সেখানেও কোনো সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন আলিনা।

মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় আলিনা শ্যামলীতে নানুর বাসায় বেড়ে উঠেছেন। চলতি বছর তার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আলিনার বিষয়ে আরও জানা গেছে, নানুর বাসা তার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার দাবি, পুলিশ সেই অভিযোগ নেয়নি।

ভিডিও বার্তায় নিজের সর্বশেষ অবস্থানের বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। সেই সঙ্গে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে আলিনার বক্তব্য জানতে তার ব্যবহার করা দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে তন্ময় ঢাকা পোস্টকে জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আলিনার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে আলিনাকে তন্ময় বিয়ে করবেন বলে তার পরিবারকে জানায়। তখন তন্ময়কে তারা পরিবার বলেন, আলিনার বায়োডাটা এনে দিতে। আলিনার সেই বায়োডাটায় লিখা ছিল তার বাবা একজন পিএইচডিধারী, তার মামা শিল্পপতি। এছাড়াও আলিনা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে কোনো এক কারণে তন্ময়ের পরিবার এই বিয়েতে রাজি হয়নি। তবে ছেলের জোরাজোরি কারণে বিয়েতে সম্মতি দিলেও পরিবারের পক্ষ থেকে তন্ময়কে শর্ত দেয়, বিয়ের পর তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকতে হবে।

তন্ময় আরও জানান, পরিবারের কথামত বিয়ের আগে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বাসায় নেন তিনি। বিয়ের পর আলিনাকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় উঠেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরই তন্ময় জানতে পারেন, মা-বাবার যে পরিচয় আলিনা তাকে দিয়েছিলেন তা সত্য নয়। বাবার পরিচয় ঠিক থাকলেও তার মায়ের পরিচয় আলিনা লুকিয়েছে।

তন্ময় এসব বিষয়ে আলিনাকে জিজ্ঞাসা করলে আলিনা জানায়, তার মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক দিন আগে। তার মা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তার নানার বাড়িতে সে বড় হয়েছে।

এদিকে তন্ময় তার স্ত্রীর বিভিন্ন ফাইল ঘেঁটে একটি জিডির কপি পান। সেই জিডি আলিনার বিরুদ্ধে তার নিজের মা করেছিলেন। এ বিষয়ে আলিনাকে প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি বলেন জানান তন্ময়। ব্যক্তিগত কাগজপত্রে হাত দেওয়ার কারণে তন্ময়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় আলিনার।

তন্ময় আরও জানান, বিবাহিত জীবনের কয়েক মাস চলে যাওয়ার পর তিনি লক্ষ্য করেন আলিনা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনলাইন ক্লাস করছেন না। পরে এ বিষয়ে তন্ময় খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন আলিনা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে আলিনা। এসব বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়িতে থাকে তন্ময়ের। এক পর্যায়ে আলিনার প্রতি তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।

সর্বশেষ আলিনার বিষয়ে বড় একটি তথ্য নাড়িয়ে দেয় তন্ময়কে। তিনি ব্যক্তিগত ফাইল গেটে দেখেন আলিনার ব্যাংক একাউন্টে ৪৬ লাখ টাকার একটি লেনদেন হয়েছে। এত বিশাল অংকের টাকা কোথায় থেকে এসেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলিনা কোনো উত্তর দিতে পারেনি তন্ময়কে। 

আর এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুন আলিনা ও তন্ময়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এই ঝগড়ায় তারা দু’জন আহত হন। পরে আলিনা ও তন্ময়ের ঝগড়া দেখে তাদের পাশের ফ্ল্যাটের এক ভাড়াটিয়া আদাবর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তাদের দু’জন আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে, তারা পুলিশকে জানায় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেবেন। তাদের কথা শোনে পুলিশ চলে যায়। এরপরেও তাদের মধ্যে মিল হয়নি। ওই দিন রাতের ঘটনার পর থেকেই আলিনা ও তন্ময় আলাদা থাকেন।

এ বিষয়ে তন্ময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৭ জুন রাতের ঘটনার পর আলিনা সঙ্গে বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিটমাট করার চেষ্টা করি। তখন সে আমার কাছে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ৫৪ লাখ টাকা দাবি করে। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। এছাড়া সে এখন আমার পরিবারকে জড়িয়ে নানা ধরনের মিথ্যাচার করছে। এই বিয়ের সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার ধারণা, আলিনা একটি চক্রের সদস্য। সে ওই চক্রের মাধ্যমে আমাকে ব্ল্যাকমেলিং করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। তার এই অপচেষ্টা ও প্রতারণার কারণে গত ১১ আগস্ট আমি আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।

জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী তেজগাঁও বিভাগের কোনো থানায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগ করলে এ বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এমএসি/এসএসএইচ/ওএফ